অবশেষে শহর বর্ধমানের অদূরে শিল্পসেতু গড়ে তুলতে কেন্দ্রের বরাদ্দ অনুমোদন পেল। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পোলেমপুরে কৃষক সেতুর পাশে বিকল্প আরও একটি সেতু হবে বলে ঘোষণা করেন। তারপর রাজ্যের অন্যতম বৃহত্তম এই সেতু তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকার আগে আবেদন করা হয় কেন্দ্রীয় বরাদ্দের জন্য। অবশেষে সেই অনুমোদন মিলেছে বলে রাজ্য পূর্ত দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এই শিল্পসেতুর পাশাপাশি দামোদরের উপর আরও একটি সেতু নির্মাণের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছিল। সেই আবেদনেও কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। এরপর শিল্পসেতু তৈরিতে আর কোনও সমস্যা থাকলো না বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ধমানের পোলেমপুর এলাকায় দামোদর নদের উপর কৃষকসেতুর ৫০ বছর পার হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল সেতুর উপর যানবাহন চলাচল বেশ কিছুটা ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণবঙ্গের ৫-৬ জেলা সহ উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। কয়েকবার কৃষক সেতুর মেরামত, স্বাস্থ্য পরীক্ষা সবই হয়। তারপর বিকল্প সেতুর কথা ভাবা হয়। বিষয়টি পৌঁছে যায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি নিজেই নতুন সেতুর অনুমোদন দেন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। রাজ্য বাজেটে শিল্প সেতু নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। প্রস্তাব ছিল সেতু তৈরির জন্য আরও ১৪৬ কোটি টাকা দেওয়া হবে। তবে ওই টাকায় সেতু, সংযোগকারী রাস্তা তৈরি সম্ভব নয়। জানিয়ে দেওয়া হয় দরপত্রে আবেদনকারী সংস্থার পক্ষ থেকে। তাদের দরপত্রে ৩৫০ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য পূর্ত দপ্তর ওই টাকার অনুমোদন দেয়নি।
তবে শিল্প সেতু সহ বর্ধমানের ইডেন খালের উপর সেতুর জন্যও কেন্দ্রীয় সড়ক পরিকাঠামো দপ্তরে আবেদন পাঠানো হয় অর্থ বরাদ্দ করার জন্য। চাওয়া হয় ৪০১.২৪ কোটি টাকা। যদিও এবার ৩৪৭.১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলো কেন্দ্রের তরফে। জেলা পূর্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শিল্পসেতুর পাশাপাশি ইডেন খালের উপর নতুন সেতু তৈরিতে আর কোন বাধা রইলো না। বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্য সড়কের উপর শিল্প সেতুর জন্য ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন দপ্তরে দুটি সেতুর জন্য নকশা জমা দেওয়া হয়েছে। জানানো হয় ৭ রাজ্য সড়কের উপর পোলেমপুরে যে সেতু হবে ৬৪০ মিটারের। তিন লেনের এই সেতু হয়ে গেলে যাতায়াতের সমস্যা অনেকখানি মিটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। ৫টি স্তম্ভের উপর কেবল সংযোগ করে আধুনিক প্রযুক্তিতে সেতু হবে। একই সঙ্গে দামোদরের উপর ইডেন খালের যে সেতু হবে তা হবে তিন লেনের। লম্বায় হবে ৮০ মিটার।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে চার মাসের মধ্যে কাজের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন না নিলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। তার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি তুঙ্গে। এরই মধ্যে সেতু গড়ে তুলতে সেচ দপ্তরের জমিতে দখলদারদের হটিয়ে দেবার কাজ শুরু হলো। এদিকে রাজ্য পূর্ত দপ্তর জানিয়েছে, যে সংস্থাই দরপত্র দেবে তাদের ৭৩০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।