• ‘গয়নার দোকান থেকে ১০০ গ্রাম সোনা চুরি’! ওড়িশায় গ্রেফতার বাংলার বিজেপি নেতা
    আনন্দবাজার | ২৮ জুন ২০২৫
  • গয়নার দোকান থেকে ১০০ গ্রাম সোনা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা! এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রাজনৈতিক মহলে। স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে শাসকদল। সমাজমাধ্যমে রাজ্য তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করেন, হবিবপুরের বিজেপি যুব মোর্চার নেতা সোমনাথ সাউ ২৫ লক্ষ টাকার গয়না চুরি করার সময় ওড়িশা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। পাল্টা বিজেপির দাবি, একদা বিজেপির সঙ্গে যোগ ছিল চুরিকাণ্ডে ধৃত সোমনাথের। বর্তমানে পদ্মশিবিরের কোনও পদে নেই তিনি। তা ছাড়াও যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, দলীয় রং না দেখে না বিজেপি শাসিত ওড়িশায় সোমনাথের গ্রেফতারি এ রাজ্যের শাসকদলের কাছে ‘শিক্ষণীয়।’ কারণ, প্রতিবেশী রাজ্য সুশাসন ‘প্রতিষ্ঠা করেছে।’’

    স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে ওড়িশার জলেশ্বরের একটি সোনা দোকান থেকে প্রায় ১০০ গ্রাম সোনা চুরি করে পালাতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়েন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা সোমনাথ। তৃণমূলের দাবি, ওই ব্যক্তি বিজেপির যুব মোর্চার নেতা। বিজেপির জেলা (পশ্চিম মেদিনীপুর) যুব মোর্চার সম্পাদকের পদে রয়েছেন। প্রমাণ হিসাবে পশ্চিম বিজেপির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে সোমনাথের ছবি তুলে ধরেছেন তৃণমূল নেতারা। কুণাল সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজে চুরির দৃশ্য আছে। সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়েরা তাকে ধরে ফেলে এবং পুলিশে দেয়।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সোমনাথের দু’টি ছবি পোস্ট করে তৃণমূলের কুণাল লিখেছেন, ‘‘কাদের সঙ্গে তার ছবি আছে দেখুন।’’

    যদিও সোনা চুরির অভিযোগে ধৃত যুবকের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন ওই দলের জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস। তিনি বলেন, ‘‘ওই যুবক একসময় বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এটা ঠিক। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে বিজেপির সঙ্গে ওঁর কোনও যোগাযোগ নেই।’’

    কিন্তু নেতাদের নামের তালিকায় তো সোমনাথের নাম রয়েছে? বিজেপি নেতা অরূপের ব্যাখ্যা, ‘‘নতুন জেলা কমিটি হয়নি বলেই ওঁর নাম হয়তো থেকে গিয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন,‘‘খুনি-ধর্ষকদের দল তৃণমূলের মুখে এ সমস্ত অভিযোগের কথা মানায় না।’’ তিনি কসবার ল কলেজের ঘটনার কথা টেনে বলেন, ‘‘ওদের ছাত্রনেতা ওদের দলেরই ছাত্রনেত্রীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ করেন। নদিয়ায় ওদের ছোড়া বোমায় ১১ বছরের নাবালিকার মৃত্যু হয়।’’ তাঁর সঙ্গে ছবি রয়েছে বলে বিতর্ক। সেই হিরণ অবশ্য তাঁর সঙ্গে এই অভিযুক্তের ছবি থাকার মধ্যে অস্বস্তির কিছু দেখছেন না। আনন্দবাজার ডট কমকে তিনি বলেন, ‘‘এ তো খুব ভাল কথা। ওড়িশায় বিজেপির সরকার রয়েছে। সেই সরকারের পুলিশ এক জন চোর বা ডাকাতের সন্ধান পেয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে। কোনও রাজনৈতিক রং খোঁজার চেষ্টাই করেনি। এর জন্য ওড়িশার সরকার এবং পুলিশকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। ওড়িশার বিজেপিকেও আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি যে, তাঁরা এই রকম স্বচ্ছ প্রশাসন তৈরি করতে পেরেছে।’’ বিজেপি বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘এই ছবিটা দেখে বুঝতে পারছি যে, এটা ২০২১ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময়ে তোলা হয়েছিল। সে সময়ে রাস্তাঘাটে প্রচার করেছি। দু’পাশে হাজার হাজার লোকজন এসেছেন। ডান দিকে, বাঁ দিকে অনেকে ছবি তুলেছেন। তখনই এই ব্যক্তিও ছবি তুলেছিলেন। আমার পক্ষে তো জানা সম্ভব নয় যে, যাঁরা ছবি তুলছেন, তাঁরা চোর না ডাকাত!’’

    যদিও চুরির ঘটনায় নেতার গ্রেফতারি নিয়ে বিজেপি-কে কটাক্ষ করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-র নেতা মানে নারীপাচার, ড্রাগ পাচার, সোনাপাচারের সঙ্গে যুক্ত। ভদ্রলোক বিজেপি করে না। আর এই জেলায় তো বিজেপির অস্তিত্বই নেই। যে ক’জন বিজেপির সঙ্গে যুক্ত, খতিয়ে দেখলে তাদের সকলেরই এই রকমের চরিত্রের কথা জানা যাবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)