সংবাদদাতা, গঙ্গারামপুর: গত লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রচারের সময় সুকান্ত মজুমদারকে জেতালে গঙ্গারামপুরের দই, কাঠের মুখোশ ও তাঁত শিল্পের উন্নয়নের কথা শুনিয়েছিলেন অমিত শাহ। বংশীহারি এসে শাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হস্তশিল্প ও জেলার ক্ষীর দই বিশ্বের দরবারে প্রসিদ্ধ হবে। একাংশের অভিযোগ, নির্বাচনে জয়ী হয়ে সুকান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন বটে, কিন্তু সুদিন ফেরেনি জেলার হস্তশিল্পীদের। গঙ্গারামপুরের প্রসিদ্ধ তাঁত শিল্পও কার্যত বন্ধ হওয়ার পথে। কুশমণ্ডির কাঠের মুখোশ শিল্প ধুঁকছে। আবেদন করেও গঙ্গারামপুরের ক্ষীর দইয়ের জিআই ট্যাগ জোটেনি।
অভিযোগ, বালুরঘাটের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আনতে পারেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত। তৃণমূলের অভিযোগ, মন্ত্রী হয়ে বালুরঘাটের সাংসদ এখন বেশিরভাগ সময় দিল্লিতে থাকেন। বাকি সময় রাজ্যের রাজনীতি সামাল দিতেই ব্যস্ত। ঝটিকা সফরে জেলায় এলেও জেলাবাসীর দুর্দশার কথা শোনেন না। জেলাবাসী বিজেপির প্রার্থীকে জেতালেও জেলার উন্নয়ন সেভাবে কিছুই হচ্ছে না।
তৃণমূলের এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সুকান্ত। তাঁর মন্তব্য, বালুরঘাট রেল স্টেশনের আগের ও পরের ছবি তুলে তৃণমূল অফিসিয়াল পোস্ট করুক, তাহলেই বুঝতে পারবে উন্নয়ন কাকে বলে। যথা সময়ে সঠিক কাজ হবে। এক এক করে জেলার সব কাজ করা হচ্ছে। মিথ্যে রটিয়ে তৃণমূল ভোটে সুবিধা করতে পারবে না।
বছর ঘুরলে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে একাধিক ইস্যুকে সামনে রেখে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে ঘাসফুল শিবির। কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা তারা তুলে ধরতে চাইছে জেলার মানুষের কাছে। জেলায় বাম্বু মিশনের কাজ শুরু হলেও আদতে বাঁশ ও কাঠ শিল্পীরা উপকৃত হচ্ছেন না বলে অভিযোগ। গঙ্গারামপুরের তাঁতি অঙ্কুশ বসাক বলেন, আমাদের তাঁত এখন নির্ভর করছে মহাজনদের কাজের উপর। ফুলিয়ার মহাজন কাজ দেন। সেটা করে আমরা কিছু পারিশ্রমিক পাচ্ছি। কোনওরকমে কিছু শিল্পী বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁত শিল্পকে। অঙ্কুশের আক্ষেপ, কোনও সরকার আমাদের জন্য এগিয়ে আসছে না। কুশমণ্ডির বাঁশশিল্পী গৌতম বৈশ্যর কথায়, বাম্বু মিশনের নামটাই শুনেছি। কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে শিল্পীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, জানা নেই। ঊষাহরণের প্রায় ৩০টি পরিবারে শিল্পী রয়েছেন। বাঁশ দিয়ে গৃহসজ্জার কাজ করে থাকি। কেন্দ্র পাশে দাঁড়ালে আমরা উপকৃত হব।
গঙ্গারামপুরের দই প্রস্তুতকারক বাবু রায় বলেন, আমাদের কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধা নেই। নিজেদের উদ্যোগে দই তৈরি করে দোকানে বিক্রি করি। কেউ আমাদের বিষয়ে ভাবে না।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ করে জেলা তৃণমূল সভাপতি সুভাষ ভাওয়ালের কটাক্ষ, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি বড় বড় ভাষণ দিয়েছিল, কিন্তু কাজ কই? কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা প্রচার করা হবে মানুষের কাছে। পাল্টা জেলা বিজেপি সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত নিশ্চয় পরিকল্পনা করে এগচ্ছেন। শিল্পীদের স্বার্থে সবটা সময়মতো হবে।