• সাইবার প্রতারকের থাবা হলদিয়ার শিল্প সংস্থায়, হাতিয়ে নিল দু’কোটি
    বর্তমান | ২৯ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: সাইবার প্রতারকরা এবার থাবা বসিয়েছে হলদিয়ার শিল্পসংস্থার উপরেও। বেঙ্গালুরুর আইটি সংস্থার ছদ্মবেশে হলদিয়ার এক শিল্প সংস্থা থেকে প্রায় দু’কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাইবার প্রতারকদের বিরুদ্ধে। পরে আরও ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ফাঁদ পেতেছিল প্রতারকরা। শেষমেশ তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তবে বন্দর শহরের ওই শিল্প সংস্থার দুঁদে ফিনান্স অফিসার ও অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের এভাবে ধোঁকা দিয়ে দু’কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তাজ্জব তদন্তকারী পুলিস আধিকারিকরা। অভিযোগ, ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের (এমডি) নাম করে অন্য আধিকারিকদের কাছে ভুয়ো মেসেজ পাঠিয়ে প্রায় দু’কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। শিল্পশহরে করোনার পর থেকে অনলাইন প্রতারণা বা সাইবার প্রতারণা মাত্রাছাড়া আকার নিয়েছে। গত তিন বছরে সেই প্রতারণার কৌশল বার বার বদলেছে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে সাইবার প্রতারণার খপ্পরে পড়ে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা খুইয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। শিল্প আধিকারিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক কেউ বাদ নেই সেই তালিকায়। সম্প্রতি একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া চাকরির ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়ানোর ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়েছে। কিন্তু খোদ শিল্প সংস্থাকে এভাবে ফাঁদে ফেলার ঘটনা হলদিয়ায় প্রথম, বলছেন পুলিস আধিকারিকরা। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়ার এক শিল্প সংস্থা সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা খুইয়েছে বলে দুর্গাচক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগ, ওই সংস্থার এমডি’র নাম করে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ আসে সংস্থার চিফ অপারেটিং অফিসারের কাছে। সেই মেসেজ পেয়ে বেঙ্গালুরুর একটি আইটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে প্রায় দু’কোটি টাকা ট্রান্সফার করেই সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়েন হলদিয়ার ওই সংস্থার আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, ২৫ জুন বিকেল ৩টে ১৯ মিনিটে এমডি’র নাম করে মোবাইলে মেসেজ পান সংস্থার হলদিয়ায় কর্মরত চিফ অপারেটিং অফিসার। সেই মেসেজে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ‘নীচের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জরুরিভিত্তিতে টাকা ট্রান্সফার করতে হবে।’ বেঙ্গালুরুর একটি আইটি সংস্থার বেসরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফারের নির্দেশ আসে ওই আধিকারিকের কাছে। মেসেজের ওই নির্দেশ সত্যি মনে করে এরপরই তড়িঘড়ি করে বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিট নাগাদ আরটিজিএস করে ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা ওই আইটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় বলে সংস্থার দাবি। 

    হলদিয়ার ওই সংস্থার আধিকারিকরা টাকা পাঠানোর পর তাঁদের নজরে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এমডি যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেন, সেখান থেকে মেসেজ না এসে অন্য নম্বর থেকে তাঁর নাম করে মেসেজ এসেছে বলে পুলিসের কাছে দাবি সংস্থার আধিকারিকদের। ওই সংস্থার আধিকারিকরা সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন বুঝতে পেরেই একাধিক ব্যবস্থা নেন। সংস্থার পদস্থ আধিকারিক বলেন, সাইবার প্রতারকদের কৌশল কেউ বুঝতে পারিনি। ওই ঘটনার পরই সংস্থা যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এই লেনদেন করে, তাদের নোটিস দিয়ে টাকা ট্রান্সফার বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে। ওই ঘটনার পর ফের ওই প্রতারকরা ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা এখনও সক্রিয় রয়েছে এবং ভয় দেখাচ্ছে। হলদিয়ার এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী বলেন, বিষয়টি নজরে এসেছে। পুলিস তদন্ত শুরু করেছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রতারকদের অ্যাকাউন্ট এখন সক্রিয় রয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)