• বেসক্যাম্প যেন পিকনিক স্পট! প্লাস্টিক দূষণে ‘হতাশ’ বর্ধমানের এভারেস্টজয়ী
    বর্তমান | ২৯ জুন ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্লাস্টিকের বোতল। কোথাও কোথাও পড়ে রয়েছে চকোলেটের প্যাকেট। কোথাও আবার ঠান্ডা পানীয়ের বোতল। সবমিলিয়ে কঠিন আবর্জনার স্তূপ মাউন্ট এভারেস্টের বেসক্যাম্পে! সমতল ছাড়িয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে এভাবে প্লাস্টিক দূষণ দেখে মন ভালো নেই সৌমেন সরকারের। অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে সরকারি উদ্যোগে পর্বতারোহীদের সচেতন করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।    

    সম্প্রতি এভারেস্ট জয় করে ফিরেছেন বর্ধমানের রানিসায়রের বাসিন্দা সৌমেন। জয়ের অভিজ্ঞতা শোনাতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘বেসক্যাম্পে গিয়ে প্লাস্টিকের বোতল, বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। এগুলি আমরা নিজেদের শহরে দেখি। প্লাস্টিক নগরজীবনকে বিষময় করে তুলছে। সেগুলি এখন এভারেস্টের মাথায় পৌঁছে যাবে, ভাবতে পারছি না। আমার মনে হয়, যাঁরা লোকদেখানো পর্বতে যান, তাঁরাই এভাবে নোংরা-আবর্জনা ফেলে আসেন। তবে, পর্বতকে ভালোবাসার টানে যাঁরা যান, তাঁরা এ কাজ করতেই পারেন না।’ এভারেস্টের শৃঙ্গ ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে হাইকিং উৎসাহীদের এটি জনপ্রিয় অভিযানও। ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি সরকারি তথ্য বলছে, এভারেস্ট অভিযাত্রীদের সংখ্যা ক্রমেই লাফিয়ে বাড়ছে। ১৯৭৯ সালে অভিযান করেছিলেন ৩ হাজার ৬০০ জন। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজারেরও বেশি। স্বাভাবিকভাবেই অভিযাত্রীদের ব্যবহার করা পরিত্যক্ত জিনিসপত্রে দূষণ বাড়ছে এভারেস্টের চূড়োয়। এরমধ্যে প্লাস্টিক দূষণ অন্যতম। এ ছাড়াও মৃতদেহ ও অভিযাত্রীদের মলমূত্রও দূষণ ছড়ানোর তালিকায় রয়েছে। সৌমেন বলছিলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একটা ব্যাগ থাকে। তাতেই প্লাস্টিক বা আবর্জনা ভরে রাখি। কিন্তু এক শ্রেণির দায়িত্বজ্ঞানহীন পর্বতারোহী এই কাজ করে আসছেন। তাঁরা এভারেস্টের শৃঙ্গ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না। বেসক্যাম্প থেকেই ফিরে আসেন। এরকম অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়েছিল। তাঁদের টেকনিক্যাল বিষয়েও খুব বেশি অভিজ্ঞতা থাকে না। অথচ, এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখেন।’ কিন্তু স্বপ্নপূরণ করতে হলে শুধু শারীরিক সক্ষমতা থাকলে হবে না। টেকনিক্যাল বিষয়েও পারদর্শী হতে হয়। সৌমেনের কথায়, ‘এই টেকনিক্যাল পাঠ শেরপাদের কাছে শিখতে হয়। এভারেস্টকে ওঁরা আপন আত্মীয় বলে মনে করেন। কেউ বেসক্যাম্প নোংরা করলে শেরপারা ভালোভাবে দেখেন না। প্রতিবাদ করেন। তারপরও অনেকেই নিয়ম ভাঙে। অভিযানের পর নেপাল সরকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় জোর দেয়। তারপরও কিছু প্লাস্টিক সেখানে থেকেই যায়। অভিযানে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া আরোহীদের দেহও অনেক সময় দীর্ঘদিন পড়ে থাকে। সেগুলিও দূষণ ছড়ায়।’ 

    সেই অভিজ্ঞতা বেশ ভয়ঙ্কর! সৌমেন বলছিলেন, ‘চূড়ায় ওঠার সময় এক জায়গায় আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ি। সামনেই দেখি দেহ পড়ে রয়েছে। আমার সঙ্গে থাকা শেরপা বললেন, গত বছর এক বিদেশি এভারেস্টে এসে মারা যান। দেহটি নামানো সম্ভব হয়নি। একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেই দেহ টপকেই আমরা চূড়ায় উঠেছিলাম। উঁচু থেকে বড় পাহাড়গুলিকে ছোট দ্বীপের মতো মনে হচ্ছিল। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে নেমে আসি সেই পথও যথেষ্টই দুর্গম ছিল। স্থানে স্থানে প্লাস্টিকের বোতল ছড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে বড্ড বেমানান মনে হচ্ছিল।’ • সৌমেন সরকার।
  • Link to this news (বর্তমান)