নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: তালডাংরায় জাল নোট কাণ্ডে ধৃতদের জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারী অফিসারার। ধৃত দুলাল হাসান মল্লিক ইউটিউব দেখে জাল নোট তৈরির কৌশল রপ্ত করেছিল। জনপ্রিয় ওই সোশ্যাল সাইটে হিন্দি ক্রাইম সিরিজ দেখে সে জাল নোট ছাপানোর প্রক্রিয়া শিখেছিল। পরে একটি প্রিন্টার কিনে বছর পঁচিশের দুলালের হাতেখড়ি। জাল নোট বানানো শেখার পর গ্রেপ্তার হওয়া অপর দুষ্কৃতী গোলাম খানকে সে সঙ্গে নেয়। জাল নোট একা বাজারে ছাড়া মুশকিল বুঝে দুলাল দলভারী করে। ওই চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে বলে পুলিস জানতে পেরেছে। তারা বর্তমানে তালডাংরা থানার নজরে রয়েছে। দ্রুত তাদের জালে তোলা হবে বলে পুলিস আধিকারিকরা জানিয়েছেন। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরার পাশাপাশি তদন্তের স্বার্থে বাজেয়াপ্ত ৫০০ টাকার জাল নোটের ফরেন্সিক পরীক্ষার প্রয়োজন বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। উদ্ধার হওয়া নোট পরীক্ষার জন্য পুলিসের তরফে শালবনীর ছাপাখানায় পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাঁকুড়ার পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, ইউটিউবের ক্রাইম সিরিজ দেখে ধৃতরা জাল নোট তৈরি শিখেছিল। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ধৃতদের চারদিনের পুলিস হেফাজতে নিয়ে জেরা চলছে। বাজেয়াপ্ত নোটগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য শালবনীর ছাপাখানায় পাঠানো হচ্ছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়াশোনা বেশি দূর না করলেও দুলাল ‘টেকস্যাভি’ ছিল। তালডাংরার পাঁচমুড়া অঞ্চলের লালবাঁধের বাসিন্দা দুলালের মোবাইল সহ ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ব্যবহারের খুঁটিনাটি জানার আগ্রহ ছিল ছোট থেকেই। পুলিসি জেরায় দুলাল স্বীকার করেছে, বছর দুয়েক আগে সে হিন্দি ক্রাইম সিরিজে জাল নোট ছাপানোর বিষয়টি লক্ষ্য করে। ‘ফর্জি’ সিরিজে কীভাবে জালনোটের জালিয়াতি করা যায়, পুলিস বা অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থাকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবেই বা বহাল তবিয়তে থাকা যায়, সেই সব বিষয়ে নানা এপিসোড রয়েছে। তা দেখে দুলালের আগ্রহ বেড়ে যায়। কম পরিশ্রমে বড়লোক হওয়ার নেশা তার মাথায় চেপে বসে। নিজের লক্ষ্যে কিছুটা এগনোর পর সে প্রতিবেশী তথা বিশ্বস্ত ‘বন্ধু’ গোলামকে বিষয়টি জানায়। গোলামও জাল নোটের কারবারে নাম লেখাতে রাজি হয়ে যায়।
এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘এ-ফোর’ সাইজের উন্নত মানের কাগজ কিনে তারা প্রথমে ৫০০ টাকার আকারে কাটত। পরে প্রিন্টারের সাহায্যে আসল ৫০০ টাকার ডুপ্লিকেট কপি তারা বের করত। খালি চোখে আসলের সঙ্গে নকল নোটের ফারাক বোঝা না গেলেও তা হাতে নিলে মালুম পাওয়া যাবে। সেই কারণেই দু’জনে তালডাংরা বাজারে ফল বিক্রেতাকে নোট দেওয়ার পর ধরা পড়ে যায়। তবে এর আগে তারা আর কোথাও ওই জাল নোট গছিয়েছিল কি না, তা ধৃতদের জেরা করে জানার চেষ্টা করছে। ধৃতরা জেরায় কুখ্যাত অপরাধীদের মতো বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে আমাদের ঘোল খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। তবে দুষ্কৃতীদের পেট থেকে কথা বের করার কৌশল আমাদেরও জানা আছে।