নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ইউনিয়ন রুমের পিছনেই নিরাপত্তারক্ষীর ঘর। আর সেই গার্ড রুম সিসি ক্যামেরার নজরদারির বাইরে। তাই সন্ধ্যার পর মোচ্ছব, ফূর্তির আসর বসাতে ল’কলেজের এই ঘরটিকেই বেছে নিয়েছিল ‘মনোজিৎ অ্যান্ড কোং’। সেই মজলিশে বান্ধবীদের নিয়ে চলত দেদার ফূর্তিও। আর বন্ধ ঘরের পাহারায় থাকতেন নিরাপত্তারক্ষী। কিছুটা ভয়ে। কারণ, প্রতিবাদ করলেই কলেজের ‘দাদাদের কোপে’ পড়তে হতে পারে। তাই গণধর্ষণ কাণ্ডের রাতে সব জেনেশুনেও পাহারায় ছিলেন ‘নিশ্চুপ’ নিরাপত্তারক্ষী। কসবা কাণ্ডে শনিবার তাঁকেও গ্রেপ্তার করল পুলিস। ধৃতের নাম পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে ১ জুলাই পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আলিপুর আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ‘নিরাপত্তারক্ষী তাঁর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তিনি কেন কলেজ কর্তৃপক্ষ বা পুলিসকে কিছু জানালেন না? প্রয়োজনে তাঁকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে।’ এর পাশাপাশি এদিন বিচারকের সামনেই নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি গ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। লালবাজার জানিয়েছে, কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তে পাঁচজনের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হয়েছে। একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের নেতৃত্বে তদন্ত চলবে। নির্যাতিতার মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষাও করা হয়েছে। পুনর্নির্মাণের জন্য রাতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনাস্থলে।
সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজে নির্মম গণধর্ষণ কাণ্ডে প্রাক্তনী ও বর্তমান ছাত্র মিলিয়ে মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল কসবা থানার পুলিস। মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র আলিপুর আদালতের আইনজীবী। কিন্তু জানা গিয়েছে, প্রায় প্রতিদিনই দুপুর তিনটের পর কোর্ট চত্বর ছাড়ত সে। বিকেলের ঠেক ছিল কসবার ওই ল’কলেজ। সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত ইউনিয়ন রুমে চলত গল্পগুজব। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদের সঙ্গে গল্পে মাতত মনোজিৎ অ্যান্ড কোং। ধৃত নিরাপত্তারক্ষী ও অন্যান্য কলেজ পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় গার্ড রুমেই বসত মদ্যপানের আসর। গত ৩-৪ বছর ধরে এটাই রেওয়াজ। বুধবার রাতে সেই ঘরেই মনোজিৎ মিশ্র, জায়িব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ঘটে নারকীয় গণধর্ষণ।
পুলিস সূত্রে খবর, মনোজিতের ফোনেই বন্দি হয়েছিল নির্যাতিতার নগ্ন ভিডিও। তা ইতিমধ্যেই পুলিসের হাতে এসেছে প্রমাণস্বরূপ। পাশাপাশি মিলেছে, নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টও। দেখা যাচ্ছে, ছাত্রীর ঘাড়, বুক, হাতে নখের আঁচড়ের দাগ রয়েছে। মাথায় আঘাতের চিহ্ন। যৌনাঙ্গেও ক্ষতের চিহ্ন পেয়েছেন চিকিৎসকরা। ধৃত মনোজিতের নখ থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সেদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ইউনিয়ন রুম, শৌচালয়ের বাইরে, গার্ড রুমের বাইরে কারা গিয়েছিল? আরও কেউ এই ঘটনায় যুক্ত কি না, তা জানতে কলেজ চত্বরের সিসি ক্যামেরার ৭ ঘণ্টার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার সময় অর্থাৎ, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ পর্যন্ত নিরাপত্তারক্ষী পিনাকীর কী ভূমিকা ছিল? তা যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও ফুটেজ গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে দাবি লালবাজারের।