• পিছনের দরজা দিয়ে এনআরসি চালু করতে চাইছে: ডেরেক ও’ ব্রায়ান
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৯ জুন ২০২৫
  • নিউ দিল্লি, ২৮ জুন, ২০২৫   মীনাক্ষী ভট্টাচার্য

    ২০২৬ ছাব্বিশের নির্বাচনে গোহারা হবে বুঝতে পেরেই ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে ঘুরপথে এনআরসির চেষ্টা করছে বিজেপি। এজন্য নির্বাচন কমিশনের নয়া নির্দেশিকায় নতুন ভোটার তালিকা তৈরির একগুচ্ছ নিয়ম নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

    জানা গিয়েছে, ভোটার তালিকায় ‘স্বচ্ছতা’ আনার অজুহাতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজ্যের কাছে একটি ‘ডিক্লারেশন ফর্ম’ পাঠানো হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, এভাবে ঘুরপথে নির্বাচন কমিশনকে দলের এজেন্ট বানিয়ে ভোটবাক্সে ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দেখানো পথে দলের অন্দরেও তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে।

    তৃণমূলের আরও অভিযোগ, সুস্থ এবং অবাধ নির্বাচনের উপর আক্রমণ শানাচ্ছে বিজেপি। কোনও পার্টির সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচন কমিশন বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া চালু করতে চলেছে। তাদের প্রশ্ন, তাহলে কমিশন কি মেনে নিচ্ছে, ভোটার তালিকায় ভূতুড়ে ভোটার আছে? ঘাসফুল শিবিরের স্পষ্ট প্রশ্ন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কীভাবে কমিশন পুরো ভোটার তালিকা বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে? বাবা-মায়ের জন্ম পরিচয়ের শংসাপত্র দেখাতে বলছে, এটা চক্রান্ত।

    শনিবার রাজধানীর কনস্টিটিউশন ক্লাবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে কমিশনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষ ও সাকেত গোখলে। ডেরেক ও’ ব্রায়েন বলেছেন, ‘আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে, কেন তারা এখন এই ধরনের ভোটার ভেরিফিকেশন করছে। কারণ, আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। আমাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা বলছে, তারা এবার ৪৬-৪৯ টির বেশি আসন পাবে না। এটি সম্পূর্ণ পিছনের দরজা দিয়ে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) বাস্তবায়নের একটি ষড়যন্ত্র।’

    রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েন আরও বলেছেন, ‘আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দু-দিন আগেই বিজেপি যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পঞ্চাশের নিচে থাকবে সেকথা বলেছেন। আমাদের নেত্রী আগেই বলেছেন এসব ঘুরপথে এনআরসি করতে চাইছে। সেই সঙ্গে বাংলায় ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে চাইছে।’

    এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে দলের রাজ্যসভার উপ-দলনেতা সাগরিকা ঘোষ ও আর এক সাংসদ সাকেত গোখলেও সরব হয়েছেন। সাগরিকা বলেছেন, ‘বাংলায় পরাজয় নিশ্চিত বুঝে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহারের অপচেষ্টা করছে বিজেপি। ঘুরপথে ভোটার তালিকায় বিস্তারিত তথ্য জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ভোটারের জন্ম সংশাপত্রের পাশাপাশি তার বাবা-মায়ের জন্ম সংশাপত্র দাবি করা হয়েছে। অবাস্তব চিন্তা-ভাবনা, আমাদের বাবা-মায়েদের জন্মের সময়ে শংসাপত্রের ছিল কি? আবার কমিশন বিএলও, বুথ লেভেল ওয়ার্কারদের তথ্য চেয়েছে। এর পিছনে কি কারণ থাকতে পারে? আসলে বিজেপি কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে, তাদের দিয়ে আমাদের বুথ কর্মীদের বিভিন্ন মামলায় যাতে  ফাঁসানো যায়, সেই চেষ্টা করছে।’

    উল্লেখ্য, এর আগে তৃণমূলের প্রতিবাদের জেরে নির্বাচন কমিশন ভুয়ো ভোটার কার্ড নিয়ে তদন্ত করার কথা জানালেও সেই কাজ এগোয়নি বলে অভিযোগ করে সরব হয়েছে সাকেত গোখলে। তিনি বলছেন, ‘সেই তদন্তের কাজ কতটা এগিয়েছে তা জানার জন্য জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিশন সেই চিঠির জবাবে সময় দেওয়ার বদলে বাংলার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করা পরামর্শ দিয়েছে।’

    এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতৃত্ব সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগেই কমিশনের প্রস্তাবিত ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে পথে নামতে চলেছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যৌথ কর্মসূচি নেবে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, দরিদ্র এবং অভিবাসী শ্রমিকদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কৌশলকে বানচাল করতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘুরপথে এনআরসি চালুর প্রচেষ্টার অভিযোগের পর প্রতি মুহূর্তে নিজেদের মধ্যে ফোন ও হোয়াটস্যাপ-এ যোগাযোগ রাখছে ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ নেতারা। কী কর্মসূচি নেওয়া হবে, তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। তৃণমূল সাংসদরা কমিশনের কাছে ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর) প্রোগ্রামটি বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন যে, এটি সমাজের কিছু অংশ, বিশেষ করে দরিদ্র এবং অভিবাসী শ্রমিকদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার একটি কৌশলমাত্র।

    এদিকে সূত্র থেকে পাওয়া খবর, ইতিমধ্যেই বিজেপির সমীক্ষকদের বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ধরাও পড়েছেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এককভাবে গত ১৬ মে তারিখে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে বিরোধিতা করা হয়েছিল এবং গত ১৯ মে তারিখে নির্বাচন কমিশনকে জবাব দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সিইও-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)