লালবাজারের বাইরে এখনও অবস্থান বিজেপির, জামিন পেতে বেল বন্ডে সই না করার সিদ্ধান্ত সুকান্তের, সমর্থন শুভেন্দুর
আনন্দবাজার | ২৯ জুন ২০২৫
কলেজকাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার গড়িয়াহাট মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল বিজেপির। সেই কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ। তার জেরেই পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। বিজেপির অভিযোগ, তাদের কয়েক জন কর্মীকে পাকড়াও করে প্রিজ়ন ভ্যানে তোলে পুলিশ। ওই প্রিজ়ন ভ্যানে তোলা হয় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকেও। এই কর্মসূচির নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে গ্রেফতার করার পর, উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
সুকান্ত-সহ বিজেপির কয়েক জন কর্মীকে গ্রেফতার করার পর, লালবাজারের বাইরে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। কলকাতার বিজেপি কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে চলে এই অবস্থান বিক্ষোভ। রাত ১১টা নাগাদ লালবাজারের বাইরে ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় হাজির হন। তিনি জানান, এখানে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। এর পরেই বিজেপির ৩ কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত, সজল ঘোষ এবং বিজয় ওঝা লালবাজারের গেটে বসে বিক্ষোভ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশ অবস্থান বিক্ষোভ থেকে সবাইকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও, বিক্ষোভ থামাতে অনড় বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। অভিযোগ, এর পরেই বলপূর্বক গ্রেফতার করা হয় কলকাতার কাউন্সিলর মিনা দেবী পুরোহিত, সজল ঘোষ এবং বিজয় ওঝাকে।
লালবাজার লকআপ থেকে সুকান্ত একটি অডিও বার্তা পাঠান। সেখানে তিনি বলেন, “এক মাসে চার বার আমাকে রাস্তা থেকে পুলিশ তুলে এনে লালবাজারে রাখছে এবং বেল বন্ডে সই করে আমায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলার মেয়েদের উপরে যে অত্যাচার চলছে, তার প্রতিবাদ জানিয়ে এ বার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বেল বন্ডে সই করে ব্যক্তিগত ভাবে জামিন নেব না। তাতে যদি আমায় সারা রাত লক আপে থাকতে হয়, আমি তা-ই থাকব।”
বেল বন্ডে সুকান্তের সই না করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর অধিকারী। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সুকান্তকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে না। ওঁকে পুলিশ আটক করতে পারে। আটক করলে তাঁকে বেল বন্ডে কেন সই করাবে পুলিশ? তিনি বেল বন্ডে সই না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে একদম ঠিক করেছেন। পুলিশ আইন মেনে কাজ করছেন না।” শুভেন্দু আরও জানান, সুকান্তের বক্তব্য এবং প্রতিবাদ যথার্থ।
প্রসঙ্গত, কসবার একটি আইন কলেজে এক জন ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগে ধৃত তিন জনের তৃণমূল-যোগ প্রকাশ্যে এসেছে। সে নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। আঙুল তুলেছে রাজ্যের শাসকদলের দিকে। শনিবার দুপুরে এই ধর্ষণের প্রতিবাদে পথে নামেন বিজেপি কর্মীরা। গড়িয়াহাট মোড়ে আগে থেকে মোতায়েন ছিল পুলিশ। তারা বিজেপি কর্মীদের গড়িয়াহাট থেকে এগোতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। অভিযোগ, সেই ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। তখনই পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হয় সুকান্ত, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়দের। এর পরেই সুকান্ত-সহ কয়েক জনকে প্রিজ়ন ভ্যানে তোলা হয়।
কলেজকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবারও রাস্তায় নামে বিজেপি। কসবা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি এবং কংগ্রেস। পথ অবরোধও করে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে নেমে কয়েক জনকে পুলিশ আটক করে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তাঁদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) দাবি করেছে, মূল অভিযুক্ত দক্ষিণ কলকাতা টিএমসিপি-র সম্পাদক পদে রয়েছেন। বাকিদের সঙ্গেও টিএমসিপির যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছে বিজেপির ছাত্র সংগঠন। রাজ্যের নারীসুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘মমতার আমলে যে নারীসমাজ সুরক্ষিত নয়, তা দক্ষিণ কলকাতার কলেজের বোনের উপর নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ করে দিচ্ছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার কমিশনার এখন মমতার সঙ্গে দিঘার রথের উৎসবে ব্যস্ত। নিরাপত্তা নিয়ে কাজের সময় কোথায়? রথের দিনে এমন বেদনার খবর শুনতে হচ্ছে। যত দিন মুখ্যমন্ত্রী, ফিরহাদ, জাভেদ খান (কসবার বিধায়ক) থাকবে, তত দিন চলবে।’’