• অতিরিক্ত চিনির বিপদ নিয়ে সচেতন করতে স্কুলে স্কুলে ‘সুগার বোর্ড’
    আনন্দবাজার | ২৯ জুন ২০২৫
  • পড়ুয়াদের মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্কুলগুলিতে ‘সুগার বোর্ড’ তৈরি করার নির্দেশ দিল সিআইএসসিই বোর্ড।সম্প্রতি ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চিলড্রেন চিঠি লিখে তাদের জানিয়েছে, একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, স্কুলপড়ুয়াদের দৈনন্দিন জীবনে যে মাত্রায় চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত, তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণ খাচ্ছে তারা। এর জেরে পড়ুয়াদের মধ্যেডায়াবিটিস, স্থূলতা, দাঁতের নানা ধরনের অসুখ দেখা যাচ্ছে। টাইপ টু ডায়াবিটিস মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ হলেও সেটা এখন অনেক স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। তারা যেহেতু অনেকক্ষণ স্কুলে কাটায়, তাই তাদের স্কুলেও মিষ্টি এবং চিনি জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছে কমিশন। সেই মতো সিআইএসসিই বোর্ড স্কুলগুলিকে এই মর্মে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে।

    নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্কুলপড়ুয়ারা কতটা চিনি খাচ্ছে, কতটা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাচ্ছে, কতটা জাঙ্ক ফুড খাচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য স্কুলে ‘সুগার বোর্ড’ তৈরি করতে হবে। সেই বোর্ডে দায়িত্বে থাকবেন কয়েক জন শিক্ষক। তাঁরাই স্কুলে পড়ুয়ারা খাবারের সঙ্গে কতটা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করবেন। মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে কী কী ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তা পড়ুয়াদের জানাবেন তাঁরা। প্রয়োজনে অভিভাবকদেরও সচেতন করবেন ওই শিক্ষকেরা।

    এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সিআইএসসিই বোর্ডের অধীনে থাকা বেশির ভাগ স্কুলই। অনেক স্কুল জানাচ্ছে, তারা ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করেছে। এ বার সুগার বোর্ডতৈরি করে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি নেওয়া হবে। ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের অধ্যক্ষ মৌসুমী সাহা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে ৩০ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত হেলথ উইকের আয়োজন করেছি। সেখানে নানা গল্পের মাধ্যমে বেশি চিনিবা মিষ্টি জাতীয় খাবার না খাওয়ার ব্যাপারে বাচ্চাদের সচেতন করা হবে। কোনটা স্বাস্থ্যকর খাবার এবং কোন খাবার স্বাস্থ্যকর নয়, সেরকম ছবি আঁকতে বলা হবে। উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হবে। ইতিমধ্যেই অভিভাবকদের সচেতন করা হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, তাঁরা যেন বাচ্চাদের টিফিনে কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি জাতীয় খাবার কম দেন।’’

    শুধু টিফিনের খাবার নয়, ক্যান্টিনে মিষ্টি জাতীয় খাবার, ঠান্ডা পানীয়, ভাজা খাবার বিক্রির বিষয়েও সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন স্কুলের অধ্যক্ষরা। কারণ, ক্যান্টিন থেকে ওই ধরনের খাবারই পড়ুয়ারা বেশি কিনে খায়। সুগার বোর্ডে যে শিক্ষকেরা থাকবেন, তাঁরা ক্যান্টিনের খাবারের দিকেও নজর রাখবেন। পড়ুয়াদের শুধুমাত্র বারণ করলেই হবে না, কেন তাদের ওই খাবার খেতে বারণ করা হচ্ছে, সেটাও বুঝিয়ে বলতে হবে। ক্যাফেটেরিয়ায়, কমন রুমে নোটিস বোর্ডের আকারে এই সচেতনতামূলক বার্তা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কয়েকটি স্কুলে ইতিমধ্যে এই নিয়ে সচেতন করা হয়েছে।

    রামমোহন মিশন হাই স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘নার্সারি থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কোন পড়ুয়া কি টিফিন আনছে, তা খেয়াল রাখেন শিক্ষকেরা।উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা টিফিনে ক্রিম কেক, পেস্ট্রি, দোকান থেকে কেনা ভাজা খাবার একাধিক বার আনলে অভিভাবকদের সচেতন করা হয়। স্কুল থেকে বেরিয়ে আশপাশের দোকান থেকে যেন ঠান্ডা পানীয় বা ভাজাভুজি না খাওয়ার বিষয়েও সচেতন করা হয় পড়ুয়াদের। সুগার বোর্ড তৈরি খুব ভাল উদ্যোগ। এই বোর্ডে কারাথাকবেন, তার তালিকা তৈরি করছি আমরা।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)