কলেজে নির্যাতিতাকে নিয়ে দু’ঘণ্টা ধরে ঘটনার পুনর্নির্মাণ! ফুটেজে দেখা গিয়েছে ধৃত চার জনকেই, আর কী জানল পুলিশ
আনন্দবাজার | ২৯ জুন ২০২৫
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে শনিবার। নির্যাতিতাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘটনার পুনর্নির্মাণ হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাসে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কলেজের নিরাপত্তারক্ষীও। ঘটনার দিনের যে সাত ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে, সেখানে চার জনকেই দেখা গিয়েছে। অর্থাৎ, ঘটনাস্থলে চার জনের উপস্থিতি নিশ্চিত। বাকি বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে কলকাতা পুলিশ। পাঁচ সদস্যের ওই তদন্তকারী দলের নেতৃত্বে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) প্রদীপকুমার ঘোষাল। ইতিমধ্যে ‘নির্যাতিতা’ এবং তাঁর বাবা-মায়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে সিট।
পিটিআইকে ওই আধিকারিক বলেছেন, ‘‘ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫ জুন সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের রক্ষীর ঘরে। এখনও পর্যন্ত মোট চার জন গ্রেফতার। শনিবার সকালে অভিযোগকারিণীকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য। তার ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে। দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পুনর্নির্মাণ হয়েছে।’’ ঘটনার পরের দিনই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের সামনে থেকে। তৃতীয় অভিযুক্তকে ওই দিন রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ গ্রেফতার করে পুলিশ। নির্যাতিতা অভিযোগপত্রে এই তিন জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তিন জনের মধ্যে এক জন তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। বাকিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং এই কাজে সাহায্য করেছিলেন। কলেজের নিরাপত্তারক্ষীকে অভিযোগপত্রে ‘অসহায়’ বলে উল্লেখ করেছিলেন নির্যাতিতা। তাঁর কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি বলে জানিয়েছিলেন। এই নিরাপত্তারক্ষীকে প্রথমে আটক করেছিল পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার সকালেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আধিকারিক বলেন, ‘‘সকালে নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি। বয়ানে অসঙ্গতি ছিল। কলেজ ক্যাম্পাসে যে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, সেখান থেকে ঘটনার সময়ে তাঁর উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে।’’ পুলিশের সূত্রে খবর, রক্ষী তাঁর দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সে সময়ে তিনি একাই ডিউটিতে ছিলেন, না কি আর কোনও রক্ষী দায়িত্বে ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিট দ্রুত তদন্ত শুরু করবে বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক। পুলিশ সূত্রে খবর, গোটা ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে নির্যাতিতা যা যা বলেছিলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তার সত্যতা মিলেছে। ২৫ তারিখ দুপুর সাড়ে ৩টে থেকে রাত ১০টা ৫০ পর্যন্ত সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ শনিবারই উদ্ধার করে পুলিশ। আপাতত তা খুঁটিয়ে দেখা এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। ফুটেজে তিন অভিযুক্তকেই ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছে। নির্যাতিতা যেমন বলেছিলেন, প্রাথমিক ভাবে সেই বর্ণনার সঙ্গে ফুটেজ মিলে গিয়েছে। নির্যাতিতা জানিয়েছিলেন, প্রথমে কলেজের ইউনিয়ন রুমে তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করা হয়। তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। তার পর রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। বাধা দিলে তাঁকে হকি স্টিক দিয়ে মারধরের চেষ্টাও করেছিলেন অভিযুক্তেরা। মূল অভিযুক্তকে নির্যাতিতা ‘জে’ বলে চিহ্নিত করেছেন। তিনি ‘এম’ এবং ‘পি’কে বাইরে পাহারায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। ঘরের বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল রক্ষীকেও। অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ধৃতদের শুক্রবার চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।