• কলেজকাণ্ডে কল্যাণের মন্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল, পাল্টা হুঙ্কার ছেড়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ অবশ‍্য সাফ বলে দিলেন, হাজার বার বলব!
    আনন্দবাজার | ২৯ জুন ২০২৫
  • কলেজকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করে শুক্রবারই বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তৃণমূল নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আবহে শনিবার সমাজমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে দলগত ভাবে শ্রীরামপুরের সাংসদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছে তৃণমূল। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানালেন কল্যাণ। জবাবি এক্স পোস্টে জানালেন, দলের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নন।

    শনিবার প্রথমে তৃণমূলের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, কল্যাণের মন্তব্য তাঁর ‘ব্যক্তিগত মতামত’। দল তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে কোনও ভাবেই একমত নয়। এক্স পোস্টে আরও লেখা হয়, ‘‘এই ধরনের বক্তব্য কোনও ভাবেই দলের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট— মহিলাদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রে বরাবরই জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। যারা এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।’’ দল দূরত্ব বাড়ানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পাল্টা গর্জে উঠেছেন কল্যাণও। শনিবার তৃণমূলের পোস্টের পরেই নিজের এক্স হ্যান্ডলে পাল্টা পোস্ট করেছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। লিখেছেন, ‘‘আমি তৃণমূলের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছি। যাঁরা এই ধর্ষকদের আড়াল করছেন, ওঁরা কি পরোক্ষে সেই সব নেতাদের সমর্থন করছেন? এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সুশীল বিবৃতি দিয়ে কোনও পরিবর্তন হবে না। বরং অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে এখনই কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’

    এ বিষয়ে কল্যাণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘আমি কী বলেছি? আমি বলেছি একজন সহকর্মীই যদি সহকর্মিনীকে সম্মান না দিতে পারেন, সহকর্মী যদি সহকর্মিনীকে ধর্ষণ করেন, তা হলে এর থেকে লজ্জার আর কিছু হয় না। কলেজের ভিতর নিরাপত্তা কে দেবে? রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে ওঠে, তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে।’’ উদাহরণ দিতে গিয়ে কল্যাণ ব্যাখ্যা করেছেন, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী সারা ভারতে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বাড়ির মধ্যে। সেখানে নিরাপত্তা কে দেবে? সাংসদের আরও দাবি, যে সব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা সবাই ২০১১-র পরে এসেছেন। তাঁরা কোনও আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়েও উঠে আসেননি। এর পরে কল্যাণ জোরের সঙ্গে আরও বলেন, ‘‘রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে ওঠে, আর সেটাকে নিন্দা করার জন্য যদি আমাকে নিন্দিত হতে হয়, তা হলে সে কথা আমি হাজার বার বলব।’’

    প্রসঙ্গত, কসবার আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে শুক্রবার কল্যাণ বলেছিলেন, ‘‘সহপাঠী যদি সহপাঠিনীকে ধর্ষণ করেন, তা হলে নিরাপত্তা দেবে কে?’’ সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার ফের বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন তৃণমূলের আর এক নেতা মদন মিত্র। কামারহাটির বিধায়ক বলে বসেন, ‘‘মেয়েটি ওখানে না গেলে এই ঘটনা ঘটত না! যদি যাওয়ার সময় কাউকে বলে যেত কিংবা কয়েক জন বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে যেত, তা হলে হয়তো এই ঘটনা আটকানো যেত।’’ মদনের মন্তব্যের পরেই নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। চাপের মুখে দুই নেতার ‘ব্যক্তিগত’ মন্তব্যের কড়া নিন্দা করে অবস্থান স্পষ্ট করে তৃণমূল। দলের তরফে রীতিমতো বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, কল্যাণ ও মদনের মন্তব্য তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। আবার প্রকাশ্যেই দলের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেন কল্যাণ! যাকে অনেকেই মনে করছেন, দলের সঙ্গে সংঘাত বেধে গেল শ্রীরামপুরের সাংসদের। কল্যাণ দলের বক্তব্যকে শুধু খণ্ডন করেননি, তিনি একইসঙ্গে পাল্টা ব্যাখ্যা এবং যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, যা বলেছেন ঠিক বলেছেন। এই আবহে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কল্যাণের এই মনোভাবকে কী ভাবে নেন, নতুন করে প্রবীণ সাংসদের বিষয়ে দল কোনও পদক্ষেপ করে কি না, সে দিকে তাকিয়ে গোটা তৃণমূল।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)