• ‘আট মাসের ব্যবধানে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ঘটল! কোথায় প্রশাসন?’ লালবাজার থেকে ছাড়া পেয়ে প্রশ্ন সুকান্তের
    আনন্দবাজার | ২৯ জুন ২০২৫
  • গত আট মাসের ব্যবধানে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা ঘটল। একটিতে পরিণতি মৃত্যু, অন্যটিতে নির্যাতিতা কোনও ক্রমে প্রাণে বেঁচেছেন। কোথায় প্রশাসন? রাতভর লালবাজারের সেন্ট্রাল লকআপে থাকার পর রবিবার সকালে ছাড়া পেয়ে এই প্রশ্ন তুলে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত।

    সুকান্ত তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘অবৈধ ভাবে আমাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল শনিবার। ওই দিন বিকেল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত লালবাজারের সেন্ট্রাল লকআপে রাখা হয়েছিল আমাদের। আজ সকালেই ছাড়া হল আমাদের।’’ পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য সভাপতি এই অভিযোগও তুলেছেন যে, পুলিশ তাঁদের বার বার চাপ দিচ্ছিল বেল বন্ডে সই করার জন্য। কিন্তু তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে, কোনও ভাবেই বেল বন্ডে সই করব না। যদি পুলিশের সাহস থাকে তো আমাদের আদালতে নিয়ে চলুক।’’

    কিন্তু রবিবার সকাল হতেই সুকান্তদের সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্নও তুলেছেন সুকান্ত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে পুলিশ আমাদের বলপূর্বক গ্রেফতার করে এনেছিল, আশ্চর্যজনক ভাবে, তারাই আবার আমাদের লকআপ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলল! শুধু তা-ই নয়, কোনও রকম সই না করিয়েই আমাদের মুক্তি দেওয়া হল। তা হলে কিসের ভিত্তিতে আমাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল?’’

    রবিবার সকালে লালবাজার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সুকান্ত জানিয়েছেন, রাতভর তাঁরা বেঞ্চে বসে ছিলেন সকলে। কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, কোনও উত্তর দিতে পারেনি পুলিশ।

    প্রসঙ্গত, কসবা আইন কলেজে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে গড়িয়াহাট মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেখাচ্ছিল বিজেপি। সেই কর্মসূচিতে গিয়ে আটক করা হয় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত-সহ বেশ কয়েক কর্মীকে। সুকান্তকে আটকের পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তার পরই লালবাজারের বাইরে বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। রাত ১১টা নাগাদ লালবাজারের বাইরে ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ‍্যায় হাজির হন। তিনি জানান, এখানে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। এর পরেই বিজেপির ৩ কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত, সজল ঘোষ এবং বিজয় ওঝা লালবাজারের গেটে বসে বিক্ষোভ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশ অবস্থান বিক্ষোভ থেকে সবাইকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও, বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে অনড় বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, এর পরেই বলপূর্বক গ্রেফতার করা হয় কলকাতার কাউন্সিলর মিনা দেবী পুরোহিত, সজল ঘোষ এবং বিজয় ওঝাকে। যদিও সুকান্ত দাবি করেন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বেল বন্ডে সই করতেও বলে পুলিশ। কিন্তু তাঁরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

    শনিবার রাতেই লালবাজার লকআপ থেকে সুকান্ত একটি অডিওবার্তা পাঠান। সেখানে তিনি বলেন, “এক মাসে চার বার আমাকে রাস্তা থেকে পুলিশ তুলে এনে লালবাজারে রাখছে এবং বেল বন্ডে সই করে আমায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলার মেয়েদের উপরে যে অত্যাচার চলছে, তার প্রতিবাদ জানিয়ে এ বার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বেল বন্ডে সই করে ব্যক্তিগত ভাবে জামিন নেব না। তাতে যদি আমায় সারা রাত লকআপে থাকতে হয়, আমি তা-ই থাকব।”

    কসবার ধর্ষণকাণ্ড প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র রিজু দত্ত বলেন, ‘‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। এই ঘটনা কেউই সমর্থন করে না। তৃণমূল এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। এখানে ধর্ষকদের মালা পরিয়ে বরণ করা হয় না। তাঁদের হাজতে পাঠানো হয়।’’

    এর পরই বিজেপিকে আক্রমণ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যাঁরা বড় বড় জ্ঞান দিচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের রাজ্যে একটু চোখ তুলে তাকাক। আমরা কোনও দিনই চাই না বাংলায় এ ধরনের একটিও ঘটনা ঘটুক। কিন্তু যাঁদের উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান যেখানে দৈনন্দিন ধর্ষণ, গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, তাঁদের কাছ থেকে জ্ঞান শোনাটা বাঞ্ছনীয় নয়।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)