এনকেডিএ-র নির্দেশের পরে বৈধ ছাড়পত্র নিতে অনীহা বহু ব্যবসায়ীর
আনন্দবাজার | ২৯ জুন ২০২৫
এ যেন যা গিয়েছে, তা গিয়েছে!
বসতি তৈরির পর থেকে নিউ টাউনের আবাসিক এলাকায় বহু বাণিজ্যিক কাজকর্ম শুরু হয়েছিল। অভিযোগ, সেই সব কাজকর্ম চলছিল আবাসিক আইন উপেক্ষা করেই। কোথাও গোটা বাড়ি জুড়েই চলছিল ব্যবসা, কোথাও আবার দমকলের ছাড়পত্র-সহ ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রই ছিল না বলে অভিযোগ। এ সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় ‘নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ বা এনকেডিএ। সেই সব বাণিজ্যিক কাজকর্ম সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিলেও এনকেডিএ চেয়েছিল, সেগুলিকে আইনি ছাড়পত্র দিতে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হল, বন্ধ হওয়ার পরে সিংহভাগ সংস্থাই আর ব্যবসা ‘বৈধ’ করতে কোনও উৎসাহ দেখাচ্ছে না। গুটিকয়েক রেস্তরাঁ ছাড়া ফের ব্যবসা চালু করার আর তেমন আবেদন এনকেডিএ-র কাছে এসে পৌঁছয়নি।
এনকেডিএ-র আধিকারিকেরা মনে করছেন, আবাসিক এলাকায় চলা বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি সম্ভবত নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে চায় না বলেই তাদের এমন মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। কলকাতার মেছুয়া বাজারের হোটেলে আগুন লেগে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে এনকেডিএ নিউ টাউনের আবাসিক এবং বাণিজ্যিক— দুই এলাকাতেই পরিদর্শন করে। তার পরে দেখা যায়, আবাসিক এলাকায় নিয়ম উপেক্ষা করে বিভিন্ন বাড়িতে বাণিজ্যিক কাজকর্ম শুধু চলছেই না, অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসার জন্য দমকল-সহ কোনও ধরনের ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, আবাসিক বাড়ির ৪০ শতাংশ অবধি জায়গা বাণিজ্যিক কাজের জন্য ব্যবহার করা যাবে। অভিযোগ, তার বদলে বহু জায়গায় গোটা বাড়িটিই বাণিজ্যিক কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল।
এনকেডিএ সূত্রের খবর, বাড়ির ভিতরেই চলছিল বিয়েবাড়ি, ক্যাফে, রেস্তরাঁ, স্পা, খেলাধুলো-সহ নানা কর্মকাণ্ড। ফায়ার অডিট করতে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগেরই দমকলের ছাড়পত্র নেওয়া নেই। এর পরেই এনকেডিএ ওই সব সংস্থাকে নোটিস দিয়ে প্রাথমিক ভাবে বাণিজ্যিক কাজকর্ম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে সংস্থাগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ব্যবসার জন্য আইনি পথে সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।কিন্তু তার পর থেকেই রেস্তরাঁ ব্যতীত আর কোনও সংস্থা বাণিজ্যিক কাজ চালু করতে উদ্যোগী হয়নি বলেই জানাচ্ছে এনকেডিএ। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘এটা খুবই আশ্চর্যের যে, বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসা কেউ চালু করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। মনে হচ্ছে, বেআইনি ভাবে ব্যবসা করে যত দিন সম্ভব রোজগার করতেই চেয়েছিল ওই সংস্থাগুলি। যে কারণে আইনি পথে হাঁটার মতো পদক্ষেপ তারা করতে চাইছে না।’’
নিউ টাউনের এ বি ব্লকে এমনই একটি বাড়ির মালিক জানালেন, তিনি ব্যবসা চালু করার জন্য এনকেডিএ-র সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই যে তিনি ব্যবসা করছিলেন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘‘আমি দমকলের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিলাম। ইতিমধ্যেই এনকেডিএ সব বন্ধ করে দিয়েছে। ওরা আবার ডেকেছে।’’
অন্য দিকে, এএল ব্লকে এমনই একটি বন্ধ অনুষ্ঠান বাড়ির মালিকের দাবি, দমকলের ছাড়পত্রের কথা শুরুতে এনকেডিএ বলেনি। তিনি বলেন, ‘‘এনকেডিএ-র সঙ্গে যোগাযোগ করব কেন? আমাদের তো এখন দমকলের এবং দূষণের ছাড়পত্র জোগাড় করতে হচ্ছে। ২০২৪ সালেও শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করতে হয়েছে। আচমকা এখন দেখছি এনকেডিএ ওই দুই ছাড়পত্র চাইছে।’’