প্রথমবার দিঘার মন্দির থেকে ভাই-বোনকে সঙ্গে নিয়ে মাসির বাড়িতে গিয়েছেন জগন্নাথ দেব। মাসির বাড়ি গিয়েও পরিকল্পনায় বদল! প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছিল, উল্টো রথ পর্যন্ত মাসির বাড়িতে জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রার যাবতীয় দায়িত্ব সামলাবেন সেখানের সেবায়তরা। সেই মতো রান্নার জন্য ১৩ জন পুরোহিত নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে ওই নিয়ম খানিকটা পাল্টে এখন ওই পুরোহিতদের পাশাপাশি, ইসকনের প্রতিনিধিরাও ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সেবা-যত্নের দায়িত্ব।
শুক্রবার রথযাত্রায় নিউ দিঘার মন্দির থেকে নন্দীঘোষ, তালধ্বজ এবং দেবদলনে চেপে ওল্ড দিঘাতে মাসির বাড়ি এসেছেন জগন্নাথ, বলভদ্র আর সুভদ্রা। মাঝ অবশ্য রাস্তায় চাকার বেড়ি খুলে যাওয়ায় হাতুড়ি ঠুকে ঠুকে নন্দীঘোষকে নিয়ে যাওয়া হয় ধীর গতিতে। সেখানে পৌঁছে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সেই রথ পড়েছিল মাসির বাড়ির প্রবেশদ্বারের সামনে ১১৬ বি জাতীয় সড়কের উপরে। পরে গভীর রাতে রথ সড়ক জনমানব শূন্য হতে একের পর এক রথ কোনওরকমে টেনে নিয়ে রাখা হয় মাসির বাড়ির সামনে।
মন্দির পরিচালনা ট্রাস্ট কমিটির সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছিল মাসির বাড়ির ১৩ জন পুরোহিত সেবা-যত্নের দায়িত্ব নেবেন। এক একদিন জগন্নাথের পছন্দের এক-এক রকম খাওয়ার নিবেদন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। যদিও, ত্রিমূর্তি প্রথমবার মাসির বাড়িতে পা রাখাতেই ওই পরিকল্পনায় বদল এসেছে। ইসকনের প্রতিনিধিরাও ওই কাজে যোগ দিয়েছেন। মাসির বাড়ির প্রধান পুরোহিত তথা দিঘা জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের ট্রাস্ট কমিটির অন্যতম সদস্য পূর্ণচন্দ্র নন্দ বলেন, ‘‘ইসকন এবং আমরা মিলেমিশে জগন্নাথের সেবা করছি। মন্দির থেকে তাঁরাও অন্ন ভোগ নিয়ে আসছেন। আমরা সেই সব ভোগ প্রভুর কাছে নিবেদন করছি। তাতে প্রভু কতটা সন্তুষ্ট হচ্ছেন, তা তিনিই জানেন।’’
মাসির বাড়ির কমিটি সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলে পৌঁছানোর পর ত্রিমূর্তিকে পোড়া পিঠা নিবেদন করা হয়। তার পরে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জগন্নাথের কাছে সিঙ্গার (ভক্তি প্রদর্শনে বিশেষ গান) পরিবেশন করেন ইসকনের ভক্তেরা। রাতে জগন্নাথ দেবের কাছে মালপোয়া এবং অন্ন ভোগ নিবেদন করা হয়। শনিবার সকালে পোড়া পিঠা এবং দুপুরের অন্ন ভোগ নিবেদন করা হয়েছে। আর সারাদিনে কমপক্ষে তিন থেকে চারবার জগন্নাথের কাছে সিঙ্গার পরিবেশন করছে ইসকনের ভক্তেরা।
পরিকল্পনার বদলের বিষয়টি মানছেন দিঘার মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইসকনের কলকাতা শাখার সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা মন্দির থেকে অন্ন ভোগ রান্না করে গাড়িতে করে প্রভুর জন্য মাসির বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। সিঙ্গার থেকে শুরু করে বস্ত্র পরানো আমরা করছি। বাকি সব কিছুই মাসির বাড়ির পুরোহিতেরা করছেন।’’