কুয়োখাদ থেকে উদ্ধার হল দু’জনের দেহ। জামুড়িয়ায় ইসিএলের নর্থ সিহারসোল কোলিয়ারি আমবাগান এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সঞ্জিত বাউরি (৩০) ও রবি কর্মকারের (৪৫) বাড়ি হিজলগড়া পঞ্চায়েতের বাড়ুল গ্রামে। ডিসিপি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস জানান, ইসিএলের সাহায্যে দু’টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ময়না তদন্তের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এটি বৈধ না অবৈধ, তা ইসিএল বলতে পারবে। সংস্থার সীতারামপুর মাইনস রেসকিউ স্টেশনের ইনস্পেক্টর কৃষ্ণকেশব রায় জানান, কুয়োখাদটি প্রায় ৫০ ফুট গভীর। কোমর সমান জল আছে। জলের কিছুটা উপরে দু’দিকে দু’টি সুড়ঙ্গ কাটা আছে। উত্তর দিকের সুড়ঙ্গ থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আমবাগান এলাকায় প্রায় ৩০ ফুট ব্যবধানে দু’টি কুয়োখাদ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তিন থেকে চার দিন আগে দুষ্কৃতীরা একটি কুয়োখাদে কয়লা কাটার জন্য সেখানে নেমে সাফ-সুতরো করে যায়। শুক্রবার রাতে চার জন এসেছিল। পাশের কুয়োখাদ থেকে দু’জনের দেহ উদ্ধার হল বলে জানান বাসিন্দারা।
শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়। শনিবার সকালে রানিগঞ্জ থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসে। আসে ইসিএলের উদ্ধারকারী দল। সকাল ১১টা নাগাদ প্রথমে সঞ্জিতের দেহ উদ্ধার হয়। দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ রবির দেহ উপরে আনা হয়। উদ্ধারে দেরির অভিযোগ তুলে গ্রামবাসীর একাংশ জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিংহকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশকে ঘেরাও করে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়। মা স্বর্ণ বাউরি জানান, সঞ্জিতের তিনটি মেয়ে। ছেলে শুক্রবার বিকেল ৫টা নাগাদ বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়ে আর ফেরেননি। রাতে পড়শিদের কাছে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু অনেক দেরিতে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। রবির স্ত্রী চায়না কর্মকার জানান, দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। আয় করার কেউ নেই। এখন কী হবে, আতান্তরে তিনি।
ইসিএল সূত্রে জানা যায়, দুষ্কৃতীরা কুয়োখাদগুলি প্রয়োজন মতো গভীর করে। তাতে নেমে দু’দিকের দেওয়ালে সুড়ঙ্গ তৈরি করে কয়লা কাটতে কাটতে এগিয়ে যেতে যায়। এর ফলে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে মৃত্যু হয়। সংস্থার ডিরেক্টর টেকনিক্যাল (অপারেশন) নীলাদ্রি রায় জানান, খনির ভিতরে জমে থাকা কয়লা অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে তাপ সৃষ্টি হয়। সেই তাপ থেকে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাসের পরিমাণ বেশি হলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়। কম থাকলেও খুব বেশিক্ষণ বেঁচে থাকা যায় না। তিনি বলেন, “অবৈধ খনি থেকে দু’জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।” কর্তৃপক্ষের দাবি, কুলটি ও জামুড়িয়ায় অবৈধ কুয়োখাদ, বারাবনি, সালানপুর ও পাণ্ডবেশ্বরের খোলামুখ খনি এলাকা থেকে কয়লা চুরির ঘটনা ঘটছে। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগও করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, অভিযোগ পেলেই ব্যবসা নেওয়া হয়।