একা একা কেন গেলেন? ধর্ষিতা ছাত্রীকে নিয়েই প্রশ্ন তোলা মদন মিত্রকে শো কজ় করল তৃণমূল, তিন দিনের মধ্যে জবাব তলব
আনন্দবাজার | ২৯ জুন ২০২৫
কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকে শো কজ় করল তৃণমূল। কসবার ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে। রবিবার দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী শো কজ়ের চিঠি পাঠিয়েছেন মদনকে। তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, কসবাকাণ্ড নিয়ে মদন যে মন্তব্য করেছেন, তাতে জনসমক্ষে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ক্যাম্পাসের ভিতরেই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। যে তিন জনের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা অভিযোগ তুলেছেন, তাঁরা তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সদস্য। এই ঘটনার পর তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়েছিল, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু মদন শনিবার বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন। জানান, ওই ছাত্রীর একা একা কলেজে যাওয়াই উচিত হয়নি। কেন তিনি একা গিয়েছিলেন, প্রশ্ন তোলেন বিধায়ক। রাতেই এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিল তৃণমূল। বলা হয়েছিল, মদনের মন্তব্য ‘ব্যক্তিগত’। দল তা সমর্থন করে না।
রবিবার মদনকে শো কজ়ের যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘‘কলকাতার কসবায় আইন পড়ুয়া ছাত্রীর প্রতি নিদারুণ ঘৃণ্য দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। অত্যন্ত সংবেদনশীল এই দুঃখজনক পাশবিক অত্যাচারের ঘটনায় পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বিশেষ ভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছে। কঠোর ভাবে ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। দুষ্কৃতীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আপনার অযাচিত, অপ্রয়োজনীয় ও অসংবেদনশীল মন্তব্য আমাদের দলের ভাবমূর্তিকে যারপরনাই আঘাত করেছে। একইসঙ্গে আপনার মন্তব্য দলের কঠোর অবস্থানের বিরুদ্ধাচারণ করছে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের এই আচরণের জন্য আপনাকে আগামী তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’’
ঠিক কী বলেছিলেন মদন?
কসবার ঘটনা নিয়ে কামারহাটির বিধায়ককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওই মেয়েটি যদি ওখানে না যেত, এই ঘটনা তো ঘটত না। যাওয়ার সময়ে যদি কাউকে বলে যেত, দু’জন বান্ধবীকে নিয়ে যেত, বাবা-মাকে নিয়ে যেত, তা হলে এটা ঘটত না। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে অভিযুক্তেরা।’’ নির্যাতিতার উদ্দেশে মদন আরও বলেন, ‘‘আপনি তো ওদের চিনতেন। জানতেন এখন পরীক্ষা চলছে। কলেজ বন্ধ। কেউ নেই। আপনাকে বলা হয়েছিল, মেয়েদের বিভাগের সাধারণ সম্পাদক করা হবে। এটা হওয়ার জন্য আপনি গেলেন কেন? গেলেন যখন চারটে বন্ধু নিয়ে গেলেন না কেন? মা-বাবাকে নিয়ে গেলেন না কেন? আমাদের পার্টির কর্মীদের জানিয়ে গেলেন না কেন? একদম একা, কলেজ পুরো ফাঁকা, আপনি চলে গেলেন! এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে অভিযুক্তেরা। আপনি বলেছেন, আপনি মূর্ছিত হয়ে পড়েছিলেন এবং বুঝতে পেরেছেন যে আপনাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আপনার প্রেমিককে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এত কিছু যদি আপনি আগে থেকেই জানতেন, এদের চরিত্র সম্পর্কে আপনি অবহিত ছিলেন... আমার মনে হয় অন্য মেয়েরাও শিক্ষা নেবে। কেউ কখনও আলাদা করে ডাকলে যাবে না।’’
মদনের পাশাপাশি কসবা নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যেও বিতর্ক হয়েছে। কল্যাণ বলেছিলেন, সহপাঠীই যদি সহপাঠিনীকে ধর্ষণ করেন, কলেজের ভিতরে পুলিশ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে কী ভাবে? কল্যাণ এবং মদন, উভয়ের বক্তব্যের নিন্দা করে শনিবার রাতে বিবৃতি দিয়েছিল তৃণমূল। তাতে বলা হয়, ‘‘মদন এবং কল্যাণের বক্তব্য ব্যক্তিগত। কোনও ভাবেই তা দলের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট— মহিলাদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রে বরাবরই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। যারা এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।’’ তার পরের দিন মদনকে কারণ দর্শানোর চিঠি ধরাল দল।