• হড়পা বানে ডুবছে গাড়ি, মৃত্যুর মুখ থেকে পর্যটকদের উদ্ধার করে ‘হিরো’ পুলিশ
    এই সময় | ৩০ জুন ২০২৫
  • সরু সুতোর উপরে ঝুলছে জীবন আর মৃত্যু! কাঁচা মাটিতে ধীরে ধীরে বসে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। হাজার চেষ্টাতেও উঠছে না কিছুতেই। ভিতরে আটকে ৪ পর্যটক। আচমকাই সিংডোবা নদীতে হড়পা বান। দু’কূল ছাপিয়ে জল বইছে। সেই জলে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে গোটা গাড়িটা। এ যাত্রায় বুঝি আর রক্ষা পাওয়া গেল না, গাড়িতে বসে বসে এমনটাই ভাবছিলেন তাঁরা। ঠিক তখনই দেবদূতের মতো আবির্ভাব হলো পুলিশের। কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে পর্যটকদের উদ্ধার করলেন তাঁরা। শনিবার রাতে ঝাড়গ্রামের শিমুলপাল এলাকার ঘটনা।

    বর্ষার সময়ে পাহাড়ি ঝর্নাগুলো নতুন করে প্রাণ পায়। তীব্র স্রোতের সঙ্গে সমতলের দিকে নেমে আসে বৃষ্টির জল। এই দৃশ্য দেখতে অনেকেই ভিড় জমান বেলপাহাড়িতে। কাটোয়া থেকে গিয়েছিলেন ৪ জন। সন্ধ্যাবেলায় গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন তাঁরা। চিরাকুটি পেরিয়ে একটু এগোতেই রাস্তার মাঝে কালভার্ট। সদ্য তৈরি হচ্ছে। পাশেই মাটির সার্ভিস রোড। সেখান দিয়ে অল্প অল্প করে বইছে সিংডোবা নদীর জল। এখানে নামতেই বিপত্তি বাধে। গাড়ির চাকা বসে যায়। বিপাকে পড়েন ৪ পর্যটক। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও গাড়ির চাকা আর ওঠে না। তখনই সাক্ষাৎ যমদূতের মতো আসে হড়পা বান।

    পর্যটকরা তখন ভয়ে কাঠ। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। ভয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন তাঁরা। ধীরে ধীরে জল বাড়তে থাকে। গাড়ির গেট পর্যন্ত উঠে যায়। চোখের সামনে সাক্ষাৎ মৃত্যু দেখে ভয়ে কাঁপতে শুরু করেন ৪ জন। ঠিক তখনই ঘটনাস্থলে হাজির হয় বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ। পর্যটকদের ফোন পাওয়ার পরে আর পুলিশ দেরি করেনি। তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে হাজির হয়। প্রথমে গাড়ি থেকে পর্যটকদের উদ্ধার করে পুলিশ। তার পরে আর্থ মুভার দিয়ে টেনে তোলা হয় গাড়িটিকে। রাতটুকু স্থানীয় একটি হোম স্টে-তে রাখা হয় পর্যটকদের। আপাতত প্রত্যেকেই নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

    পুলিশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা অর্ণব সৈকত ভদ্র। তিনি বললেন, ‘পুলিশ যে ভাবে সাহায্য করল আজীবন মনে রাখব। এই প্রত্যন্ত এলাকায় তার উপর রাতের বেলা যে আদৌ পুলিশকে পাশে পাব ভাবতেই পারিনি।’ ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বললেন, ‘বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তাই আমাদের কাছে অগ্রাধিকার। সবরকম ভাবে সহযোগিতা করা হয়। যে সমস্ত পুলিশকর্মী এই কাজ করেছেন তাঁদের প্রশংসা প্রাপ্য।’

  • Link to this news (এই সময়)