পুরবোর্ডের কাজে খুশি নন কৃষ্ণ, রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি
বর্তমান | ৩০ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: পুর পরিষেবা নিয়ে জলঘোলা! রায়গঞ্জ পুরসভার চার কো-অর্ডিনেটরের সঙ্গে রবিবার সন্ধ্যায় বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর বৈঠক হয়। আর সেই বৈঠক ঘিরে শহরের রাজনীতিতে শোরগোল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, রায়গঞ্জ পুরসভা পরিচালনা নিয়ে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস ও বিধায়কের মধ্যে চাপা বিরোধ শুরু হয়েছে। যার জন্য পুর কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতিতে কার্যত ঘুরিয়ে পুরসভার কাজে হস্তক্ষেপ রায়গঞ্জ বিধায়কের।
কারও নাম না করে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিধায়ক। কৃষ্ণ বলেন, শহরের সাফাইয়ের অবস্থা ভালো নয়। সাফাইকর্মীরা কাজে আসছেন না। সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। প্রয়োজনে সাধারণ মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামব।
এরপরেই নাম না করে এদিনের বৈঠক নিয়ে ঘুরিয়ে বিধায়ককে কটাক্ষ করেন রায়গঞ্জ পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস। তাঁর মন্তব্য, ২৭ জন কো-অর্ডিনেটরের মধ্যে চারজন বৈঠকে গিয়েছেন। কেন গেলেন, কী সমস্যা হয়েছে তাঁরাই বলতে পারবেন। সাফাই সহ বিভিন্ন কাজ ঠিকমতো চলছে। তার জন্য দক্ষ লোক রাখা আছে। কাউকে কষ্ট করে রাস্তায় নামার প্রয়োজন নেই।
পুরসভার উন্নয়নমূলক কাজ, জঞ্জাল সাফাই, রাস্তা সংস্কার, নিকাশি, নর্দমা সংস্কারের কাজে ধীর গতি নিয়ে কয়েক দফায় প্রকাশ্যেই সরব হন বিধায়ক। যা নিয়েই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। এদিনের বৈঠক নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে বিধায়কের বক্তব্য,জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রত্যেকেরই দায়বদ্ধতা আছে। আমার বিধানসভার অধীনে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও একটি পুরসভা। সেই দায়িত্ব থেকেই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। যে ক’জন কো-অর্ডিনেটর নিজের এলাকার সমস্যা নিয়ে আমার শরণাপন্ন হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এ ক্ষেত্রে পুরসভার কাজে হস্তক্ষেপের বিষয় নেই। বিরোধের বিষয় নেই।
শহরের কংগ্রেস নেতা তুষারকান্তি গুহ বলেন,শহরবাসী বুঝে গিয়েছেন প্রশাসক বোর্ড চালিত পুরসভা পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। তাই আসন্ন ভোটের আগে বিধায়ক মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।
এদিন সন্ধ্যায় রায়গঞ্জ পুরসভার কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ কল্যাণী, অভিজিৎ সাহা, পুষ্পা মজুমদার, তপন দাসদের সঙ্গে নিজের কার্যালয়ে বৈঠক করেন কৃষ্ণ কল্যাণী। কো অর্ডিনেটরদের বক্তব্য, নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন রকম সমস্যার সমাধানের জন্য বিধায়কের দ্বারস্থ হই। যাতে বড় উন্নয়নমূলক কাজে বেশি ফান্ডের ব্যবস্থা করতে পারেন বিধায়ক।
এতেই প্রশ্ন ওঠে পুরবোর্ডকে এড়িয়ে কীভাবে এই বৈঠক? ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ সাহার বক্তব্য, কসবা গেট থেকে এলাকায় কোনও বড় নিকাশি নালা নেই। দীর্ঘ সময় পুরসভার কাউন্সিলার থাকায় জানি বিশাল দৈর্ঘ্যের সেই নালা একা পুরসভার পক্ষে তৈরি সম্ভব নয়। আর ওই নালা না হওয়ায় আমার ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অংশে নিকাশি সমস্যা আছে। এ ছাড়াও নানা অসুবিধা রয়েছে। সে জন্যই আসা।
যদিও অভিজিত্ স্বীকার করেছেন শহরের কোন ওয়ার্ডে কী সমস্যা রয়েছে, তা নিয়ে বাকি কো-অর্ডিনেটরদের তিনি ফোন করেছিলেন, যাতে তাঁরা বিধায়কের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন। কিন্তু চারজন ছাড়া কোনও কো-অর্ডিনেটর সেই ডাকে সাড়া দেননি।
এ ব্যাপারে তৃণমূলের রায়গঞ্জ টাউনের সভাপতি ভোলা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিধায়ক ও পুর চেয়ারম্যানের মধ্যে বিরোধের বিষয় নেই। উল্টে দু’জন একসঙ্গে শহরের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। পুর বাসস্ট্যান্ড সরানো থেকে শুরু করে শহরের সাফাই কাজ নিয়ে একসঙ্গে দু’জনে কাজ করছেন।