নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: আসানসোলের ফতেপুরে বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের পিছনে প্রকৃত কারণ কী তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে পুলিস ও দমকল। বাড়ির বাইরের অংশে আগুনের বীভৎসতা ধরা না পড়লেও ভিতরে ঢুকতেই হাড়হিম করা দৃশ্য। ফলস সিলিং, দেওয়ালে পিভিসি প্যানেল, অত্যাধুনিক গৃহসজ্জার সব সামগ্রী ছিল। সঙ্গে দামী কাঠের আসবাবপত্র। সবকিছু পুড়ে গিয়েছে। তাহলে কি দাহ্য বস্তু দিয়ে বাড়ির সাজসজ্জাই বিপদ ডেকে আনল? পুলিস এখনও কী কারণে অগ্নিকাণ্ড তা নিয়ে নিশ্চিত নয়। প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্কিটের জেরে অগ্নিকাণ্ড বলে মনে করা হয়েছিল। দমকল জানিয়ে দিয়েছে, শর্ট সার্কিট থেকেই যে এই অগ্নিকাণ্ড, তা নিশ্চিত নয়। এতেই রহস্য দানা বাঁধছে। ব্যবসায়ী বাবলু সিংয়ের ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে কোনও ষড়যন্ত্র কি না সেই প্রশ্নও উঠছে। সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিস। এসব প্রশ্নের জট কাটাতে আজ, সোমবার ওই বাড়িতে আসবে ফরেন্সিক টিম। বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
আসানসোল দমকল কেন্দ্রের ওসি দেবায়ন পোদ্দার বলেন, আগুনে বাড়ির ভিতরের সবকিছু পুড়ে গিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে আমরা কোনও সুস্পষ্ট ধারণা করতে পারিনি। পুলিস বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
এলাকাটি নতুন করে গড়ে উঠছে। বাবলুবাবুর বাড়ির তিনদিকেই ফাঁকা জমি। একপাশে বাড়ি রয়েছে অজয় বৈদ্যর। অজয়বাবু সপরিবারে রথের মেলা দেখতে দুর্গাপুর গিয়েছিলেন। তাই প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের আঁচ পাননি প্রতিবেশীরা। যখন তাঁরা জানতে পারেন, তখন কার্যত সব শেষ হয়ে গিয়েছে। পুলিস প্রাথমিকভাবে জেনেছে, শনিবার রাতে পরিবারের সদস্যরা সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দোতলার একটি রুমে ছিলেন ব্যবসায়ী বাবলুবাবু ও শিল্পীদেবী। অন্য রুমে ছিলেন শিল্পীদেবীর বাবা ও মা। রাতে ঘুম ভেঙে শিল্পীদেবী দেখেন, পুরো বাড়িই ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। আর্তনাদ করতে করতে নীচে নেমে আসেন তিনি। তাঁর চিৎকারে পাড়াপ্রতিবেশীর ঘুম ভাঙলেও বাড়িতেই থাকা বাকি তিনজন বেরিয়ে আসতে পারেননি।
প্রতিবেশী পূর্ণিমা দাস, অজয় বৈদ্য বলেন, বাড়ির ভিতর দারুণভাবে সাজানো ছিল। বাবলু সিং ভালো মানুষ ছিলেন। শিল্পীও অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। ইন্টেরিয়র ডেকরেশনের জন্য আগুন ভয়াবহ আকার নিয়েছিল কি না আমরা জানতে চাই। পুলিস ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করুক।
বাবলুবাবু অত্যন্ত বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। কয়লার বড় কারবার রয়েছে। তাই ব্যবসায়িক শত্রুতা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। শট সার্কিট নাকি অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। পাশাপাশি বাবলুবাবু ও শিল্পী দু’জনেরই একাধিক বিয়ে। তাই সম্পর্কের কোনও টানাপোড়েন এর পিছনে রয়েছে কি না সে দিকেও তদন্তকারীদের নজর রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পুলিস প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল সূত্রে জানতে পেরেছে, অগ্নিকাণ্ডের জেরেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এবার জানা প্রয়োজন কীভাবে অগ্নিকাণ্ড। পুলিস ফরেন্সিক টিমের বিস্তারিত রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে।