মেদিনীপুরে জগন্নাথ মন্দির সংস্কার কমিটির রথের মেলা ঘিরে উন্মাদনা
বর্তমান | ৩০ জুন ২০২৫
রাজদীপ গোস্বামী, মেদিনীপুর: শ্রীশ্রীজগন্নাথ মন্দির সংস্কার কমিটির উদ্যোগে রথযাত্রা ও মেলাকে কেন্দ্র করে মেতে উঠেছে মেদিনীপুরের মানুষ। সন্ধ্যা নামতেই উপচে পড়ছে ভিড়। রথযাত্রার দিনও বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নেমেছিল। সেই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন মেদিনীপুর লোকসভার সাংসদ জুন মালিয়া, পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান প্রমুখ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মেদিনীপুর শহরের জগন্নাথ মন্দির খুবই জাগ্রত। এই মন্দিরে নিত্যভোগ দেওয়া হয়। জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি অর্থাৎ নতুন বাজার মিনি মার্কেট গুণ্ডিচা মন্দিরে সন্ধ্যা নামতেই মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। মন্দির কমিটির সদস্যরা বলেন, ২৯ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জগন্নাথদেবকে নতুন সাজে সাজানো হবে। ৫ জুলাই হবে উল্টোরথ। আগামী মঙ্গলবার লক্ষ্মীমাতার রথ বের হবে। তার প্রস্তুতিও চলছে জোরকদমে। পাশাপাশি নাম-সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সাংসদ জুন মালিয়া বলেন, এই রথযাত্রায় উপস্থিত থাকতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। মেদিনীপুর শহরের জগন্নাথ মন্দিরের নাম রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জেলার মানুষ এই মন্দির দর্শন করতে আসেন। কমিটির সভাপতি মৃণালকান্তি দাস বলেন, আগে মন্দিরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। ১৯৯৫ সালের পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। প্রতিদিন বহু মানুষের সমাগম হচ্ছে।
এই মন্দির ও জগন্নাথদেবের মাহাত্ম্য সম্পর্কে অনেক কাহিনী রয়েছে। জনশ্রুতি, বাংলার ১২৬২ সালে মল্লিকবাড়ির জমিদার জন্মেজয় মল্লিকের স্বপ্নে আসেন প্রভু জগন্নাথ। সেইমতো জমিদারবাবু বহু খুঁজে নদীর ধার থেকে নিমকাঠের গুঁড়ি এনে মূর্তি গড়ে তোলেন। তবে মন্দিরটি দীর্ঘদিন ধরে সেবাইতরা দেখাশোনা করতেন। পরবর্তীকালে শ্রীশ্রীজগন্নাথ মন্দির সংস্কার কমিটি তৈরি হয়। ২০০২ সালে এই কমিটি সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়। এরপর থেকে রথযাত্রার জৌলুস বাড়তে থাকে। নন্দীঘোষ, দেবদলন ও তালধ্বজ নামে তিনটি রথ রয়েছে। এই তিনটি রথকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রথের দড়ি টানতে ভিড় উপচে পড়ে। ভিড় সামলাতে পুলিস ও প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করে থাকেন। উপকৃত হন বহু দুঃস্থ পরিবারের মানুষ। কমিটির সদস্যরা প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিন বস্ত্রদান শিবিরের আয়োজন করেন। মন্দিরে পাওয়া বস্ত্রও গরিব মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতি রবিবার দুঃস্থদের জন্য ভোগপ্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়। মন্দির কমিটির সম্পাদক পল্টু সেন বলেন, আমাদের মূলমন্ত্র একতা। একজনের সমস্যায় সকলে পাশে থাকেন। মানুষের পাশে থাকাই মূল কর্তব্য। প্রতিবছর খুবই নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে এই রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা অরূপ দাস বলেন, এবছর ভিড়ের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মানুষ মেলায় আসছেন।