• আগুনের গ্রাসে বাংলো, পুড়ে মৃত ৩
    বর্তমান | ৩০ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ফতেপুরের ‘স্বাগতম রেসিডেন্সি’। বিলাসবহুল বাংলোর সমাবেশ। একটি বাংলোয় দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে থাকতেন ব্যবসায়ী বাবলু সিং। শনিবার রাত তখন পৌনে বারোটা। ওই বাংলো থেকে এক মহিলার আর্তচিৎকার শুনতে পান পড়শিরা। ছুটে গিয়ে দেখেন কালো ধোঁয়ায় ঢেকেছে চারদিক। দাউদাউ করে জ্বলছে বাংলোর প্রতিটি ঘর। কোনওরকমে দরজা ভেঙে ওই মহিলাকে বের করে আনেন তাঁরা। তিনি বাবলুর স্ত্রী শিল্পী চট্টোপাধ্যায়। বছর আটত্রিশের শিল্পী প্রাণে বেঁচে গেলেও দেহের প্রায় অর্ধেকাংশ ঝলসে গিয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন। তবে, বাঁচানো যায়নি বাবলু (৫১) ও শিল্পীর বাবা বীরেন্দ্রনাথ চাঁদ (৬২), মা গায়ত্রী চাঁদ (৫৭)-কে। 

    পুলিস ও দমকল এসে প্রথমে চারজনকেই উদ্ধার করে। শিল্পীকে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি হাসাপাতালে। বাবলু সহ তাঁর শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে যাওয়া হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। সেখানে তিনজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এদিকে, দমকলের দু’টি ইঞ্জিন দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে বাংলোটি। আগুন লাগার কারণ নিয়ে রবিবার রাত পর্যন্ত ধোঁয়াশায় পুলিস। আজ, ঘটনাস্থলে এসে বাংলোর ধ্বংসস্তূপ থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে ফরেন্সিক টিম।  ডিসি ধ্রুব দাস বলেন, ‘আসানসোল দক্ষিণ থানা এলাকায় একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখছি।’ 

    আসানসোল দক্ষিণ পুলিস ফাঁড়ির অন্তর্গত ফতেপুর। বৈশালী পার্কের ঠিক উল্টো দিকে জিটি রোড। তার লাগোয়া ‘স্বাগতম রেসিডেন্সি’। সেখানেই দোতালা বাংলো কিনেছিলেন কয়লা সহ একাধিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বাবলু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুনের ভয়াবহতা ছিল ব্যাপক। মুহূর্তের মধ্যেই বাংলোটিকে গ্রাস করে ফেলে। ওঁদের একমাত্র ছেলে তীর্থঙ্কর চট্টোপাধ্যায় নবম শ্রেণিতে পড়ে। সে  হস্টেলে থাকে। শিল্পীর বোন পুজা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘দিদি দু’বার বিয়ে করেছে। তীর্থঙ্কর প্রথমপক্ষের ছেলে। জামাইবাবুরও প্রথমপক্ষের স্ত্রী ও ছেলে রয়েছেন। তাঁরা  ঝাড়খণ্ডের নিড়শায় থাকেন।’ 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই বাবলু দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী ও তাঁর বাবা-মা’কে নিয়ে ওই রেসিডেন্সিতে থাকতেন। শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ তাঁদের বাংলো থেকে আগুনের শিখা বের হতে দেখা যায়। শোনা যায় শিল্পীর আর্তনাদ। বাংলো লাগোয়া মানুষজন ছুটে যান। তাঁরাই প্রথম বাড়ির বাইরের দরজা ভেঙে শিল্পীকে উদ্ধার করেন। পরে পুলিস ও দমকল ঘটনস্থালে উপস্থিত হয়। আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনে বাড়িতে ঢোকেন দমকলকর্মীরা। দেখা যায়, দোতলার একটি রুমে পুরোপুরি দগ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বাবলু । অন্য ঘরে শ্বশুর ও শাশুড়ি। উদ্ধারকারী এক দমকলকর্মী বলছিলেন, আগুনের বীভৎসতা দেখা যাচ্ছিল না। দেহগুলি পুড়ে একেবারে দলা পাকিয়ে গিয়েছিল।  রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক। মুখে মুখে ঘুরছে আগুনের ভয়াল চেহারার কথা। প্রতিবেশী অঞ্জলি সদাশিবের কথায়, ‘শিল্পীদির সেই ভয়ঙ্কর আর্তনাদ এখনও কানে বাজছে।’ সোসাইটির সম্পাদক উত্তর দাস বলছিলেন, ‘আমরা শিল্পীকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছেন তিনি।’ হাসপাতালে এসেছিলেন বাবলু সিংহের প্রথমপক্ষের ছেলে গুরদীপ সিং। তিনি বলেন, ‘আমি প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করব না।’  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)