• রথের দিন কামারপুকুর চটি সরগরম, শুরু যাত্রার বুকিং
    বর্তমান | ৩০ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: কামারপুকুর চটিকে ‘মিনি চিৎপুর’ বলাই যায়।  কারণ এখানেই বিভিন্ন যাত্রা দলের অস্থায়ী অফিস। প্রত্যেক বছর রথের দিন সেইসব অফিস নায়কদের আনাগোনায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কারণ, রথের দিনই আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় পালার বুকিং। ফুল, মালা দিয়ে সাজানো হয় অফিস। হাজির থাকেন দলের মালিক, অভিনেতারা। মিষ্টি, সরবত খাইয়ে আপ্যায়ন করা হয় বুকিং করতে আসা নায়েক ও ক্লাবের প্রতিনিধিদের। এবারও রথযাত্রায় সেই দৃশ্য দেখা গেল কামারপুকুর চাটিতে। প্রযোজকদের দাবি, কোনও অপেরাকেই এবার খালি হাতে ফিরতে হয়নি। কমবেশি প্রত্যেকেই বুকিং পেয়েছেন। 

    করোনা কালে খুবই খারাপ সময় গিয়েছে যাত্রাদলগুলির। শিল্পী, কলাকুশলীরা প্রায় না খেতে পেয়ে দিন কাটিয়েছেন। সেই দুঃসময় কাটিয়ে ফের একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে যাত্রাশিল্প। দলের মালিক, অভিনেতাদের কথায়। 

    কামারপুকুরেরে একটি দলের প্রযোজক কেশব বৈরাগ্য বলেন, প্রায় ১৬টি দল এবার পালা মঞ্চস্ত করবে। প্রত্যেকেরই সামাজিক পালা রয়েছে। তারসঙ্গে অতিরিক্ত পাঁচটি ভক্তিমূলক পালাও রেখেছেন প্রযোজকরা। গত বছর দু’টি ভক্তিমূলক পালার বুকিং নেওয়া হয়। এবার ভক্তিমূলক পালার চাহিদা বেশি দেখা গিয়েছে। অনেক নায়েক বন্ধুই ভক্তিমূলক পালা বুকিং করেছেন। ফলে প্রত্যেকের মুখেই হাসি ফুটেছে। আরেক যাত্রাগোষ্ঠীর কর্তা জয়ন্ত পাইন বলেন, আমরা এবার সামাজিক পালার পাশাপাশি ভক্তিমূলক পালা রেখেছি। রথযাত্রার দিনেই সাতটি বুকিং হয়েছে। এবার ফোনের মাধ্যমেও বুকিং চলবে। 

    বাপি অধিকারী, সঞ্জীব চৌধুরী প্রত্যেকেই বুকিংয়ের পাশাপাশি যাত্রা পালায় অভিনয়ও করেন। তাঁরা বলেন, আগের থেকে কামারপুকুর এলাকায় যাত্রাদল বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে যাত্রার চাহিদাও বাড়ছে। তবে আগের তুলনায় রোজগার এখনও সেরকম বাড়েনি। এক অভিনেতা অভিজিৎ রায় বলেন, আগে যাত্রা শুনতে বয়স্ক লোকদেরই দেখা যেত। কিন্তু এখন যুবসমাজও যাত্রা নিয়ে ভাবছে। রথযাত্রার দিনে কয়েকজন যুবক এসে পালা বুকিং করেছেন। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কামারপুকুরে প্রায় ১৬টি অপেরা কাজ করে। প্রত্যেক বছর ভাদ্র মাস নাগাদ কামারপুকুর সহ পার্শবর্তী এলাকায় শুরু হয় নতুন পালার মহড়া। তারপর বিশ্বকর্মা পুজোর সময় থেকে সারা বছর দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে চলে যাত্রাপালার মরশুম। বিশেষ করে পুজোর সময় যাত্রার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। তাই এখন থেকেই উদ্যোক্তারা বুকিং সেরে রাখছেন। তবে প্রযোজকদের একাংশের দাবি, এখনকার যাত্রাপালায় পুরুষ অভিনেতাদের সংখ্যা স্বাভাবিক থাকলেও মহিলা অভিনেত্রীর ঝোঁক কমছে। তার জেরে অনেক সময়ে পালা মঞ্চস্থ করতে গিয়ে অসুবিধা হচ্ছে।

    তবে শিল্পীরা বলেন, যাত্রা পালা আগের থেকে আধুনিক হয়েছে। বদল ঘটেছে ব্যান্ডেও। কিন্তু আর্থিক জোগান তেমন বাড়েনি। শিল্পীদের অনেকেই রাজ্যের ভাতা পাচ্ছেন না। এই ব্যাপারে প্রশাসনিক উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)