• ভোট কমেছে, তাই কি তামান্না নিয়ে তৎপরতা বিজেপির
    আনন্দবাজার | ৩০ জুন ২০২৫
  • উপনির্বাচনের ফল বলছে, দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও কালীগঞ্জে ৩-৪ শতাংশ ভোট কমেছে বিজেপির। সেই কারণেই কি তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বোমায় ১০ বছরের তামান্না শেখের মৃত্যু নিয়ে এত তৎপর হয়ে উঠেছে বিজেপি— এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।

    গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর নদিয়ার এই সংখ্যালঘু-প্রধান কেন্দ্রে প্রায় ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তিন বছর বাদে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তা বেড়ে হয় প্রায় ৩২ শতাংশ। সেখানে এ বার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তারা প্রায় ২৮ শতাংশে আটকে গিয়েছে। দলেই প্রশ্ন উঠছে, ভোট কমল কেন? আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে কি ক্ষয় পুষিয়ে নেওয়া যাবে নাকি তা আরও বাড়বে?

    বাংলার অন্য নানা কেন্দ্রের সঙ্গে কালীগঞ্জেও বিজেপির ভোট লাফিয়ে বেড়েছিল ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের ছয় শতাংশ থেকে এক ধাক্কায় তা প্রায় ৩২ শতাংশে পৌঁছে যায়। এ বারের আগে তাদের ভোট আর ৩০ শতাংশের নীচে নামেনি। বিজেপিরই একাংশের ধারণা, এ বার ভোট শতাংশ কমার বড় কারণ কালীগঞ্জ বা গোবরার মতো কিছু হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চায়েতে তাদের ভোট কমা। মাটিয়ারি ও ফরিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তারা এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান সামান্যই— মাটিয়ারিতে ১৬৩ ভোট ও ফরিদপুরে ৫৪৮ ভোট। আবার অনেক হিন্দু অধ্যুষিত বুথে যেখানে তৃণমূল এত দিন খুবই কম ভোট পেয়ে এসেছে, সেখানে এ বার একশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। উপনির্বাচন রাজ্যে পালাবদল হবে না, অতএব অনেকে শাসক দলকে ভোট দেওয়াই নিরাপদ মনে করেছেন বলে বিজেপি নেতাদের একাংশের ধারণা।

    ভোট কমার আরও সম্ভাব্য কারণ অবশ্য থাকতে পারে। যেমন প্রার্থী নিয়েই গোড়া থেকেই দলের একাংশের অসন্তোষ ছিল‌, ফলে সকলে সে ভাবে ঝাঁপাননি। আবার দলের একাংশের যুক্তি, এই এলাকার যাঁরা অন্যত্র পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই উপনির্বাচনে ভোট দিতে আসেননি। বিজেপি মিডিয়া আহব্বায়ক সন্দীপ মজুমদারের বক্তব্য, “ভোটের প্রচারে আমরা কোনও জায়গায় খামতি রাখিনি। তবে এত মানুষ রাজ্যের বাইরে আছেন, তাঁরা ভোট দেননি।” উল্টো দিকে অবশ্য তৃণমূলের ভোট দুই শতাংশ এবং বাম-কংগ্রেস জোচের ভোট তিন শতাংশ বেড়েছে। সন্দীপের দাবি, “প্রদীপ নেভার আগেই দপ করে জ্বলে উঠে। তৃণমূলও তাই। তা ছাড়া, গ্রামে-গ্রামে হুমকি-সন্ত্রাসের আবহ যে ছিল, তা তো মোলান্দিতে ওই বাচ্চাটার মৃত্যুতেই প্রমাণিত।” তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান পাল্টা বলেন, “মানুষ অবাধে নিজের রায় দিয়েছে। সবাই দেখেছে, সেই রায় কার দিকে গিয়েছে।”

    গত ২৩ জুন, ভোটগণনার দিন তৃণমূল প্রার্থীর জয় নিশ্চিত হয়ে যেতেই বড় চাঁদঘর এলাকার মোলান্দি গ্রামে সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে বোমা ছোড়া হতে থাকে। তাতেই মৃত্য়ু হয় তামান্নার। কিন্তু কৃষ্ণনগর পুলিশ মর্গে মৃতদেহের ময়না-তদন্তের সময়ে বাম-কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপি নেতাকর্মীরাও হাজির ছিলেন। শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজে মোলান্দিতে এসে তামান্নার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। ভোট কমার জেরেই কি এই বাড়তি তৎপরতা?

    বিজেপি নেতা অর্জুন বিশ্বাসের দাবি, “আমরা নৈতিকতার কারণে গিয়েছিলাম। ওই এলাকার মানুষ ভয়ে আছেন। তাঁদের মনোবল বাড়াতে গিয়েছিলাম। এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই।” ভোটের ফল প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “এটা উপনির্বাচন, অনেকেই ভোট দেয়নি। তাই ভোট কমে থাকতে পারে। আগামী দিনে আমাদের কর্মীরা নতুন প্রতিজ্ঞা নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামবেন। তখনই আসল ফল দেখা যাবে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)