বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়ছয় হওয়া টাকার অংশ ফেরাতে নির্দেশ
আনন্দবাজার | ৩০ জুন ২০২৫
স্থায়ী আমানত ভেঙে নয়ছয় হওয়ার টাকার অংশ বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছিল সিআইডি ও পুলিশ। সেই টাকা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন বর্ধমান আদালতের সিজেএম বিনোদ মাহাত। সিআইডি ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানত ভেঙে প্রায় দু’কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছিল। তার মধ্যে ২০টি অ্যাকাউন্টে ৩৩ লক্ষ টাকার হদিশ মিলেছে। সেই টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে বলা হয়েছে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী অরুণাভ চৌধুরী বলেন, “তদন্তকারী সংস্থা আদালতের মাধ্যমে যে সব অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করেছিল, তা থেকে টাকা ফেরাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।” আইনজীবীরা জানান, বর্ধমান থানা ৩৩ হাজার নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিল। তা-ও ফেরাতে বলেছে আদালত। এক মাসের মধ্যে যে সব অ্যাকাউন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা ঢুকেছে, তা-ও ফেরাতে বলা হয়েছে। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ও সিআইডিকে ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে বলেছেন বিচারক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী জানান, টাকা ফেরত পেতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। হাই কোর্ট এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বর্ধমানের সিজেএমকে নির্দেশ দেয়। তার পরেই সিজেএম সব পক্ষের বক্তব্য শুনে এই আদেশ জারি করেছেন। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের অন্যতম আইনজীবী পার্থ হাটি বলেন, “বেশ কয়েক জন আইনজীবী শুনানিতে ছিলেন। শুক্রবার বিকেলে বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন। সেই কপি এখনও হাতে পাইনি। নির্দেশ দেখার পরে আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
২০২৪ সালে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের স্টেশন বাজার শাখায় স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা টাকা মেয়াদ শেষের আগেই তুলে নেওয়া হয়। তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা তুলে নেওয়া হয়। সেই টাকা জমা পড়ে কলকাতার বিজয়গড়ের বাসিন্দা সুব্রত দাস নামে এক ঠিকাদারের অ্যাকাউন্টে। তৎকালীন রেজিস্ট্রার বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন। জাল নথিপত্র তৈরি করে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারায় মামলা হয়। পরে ঘটনার তদন্তভার নেয় সিআইডি।
তদন্তে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভক্ত মণ্ডল, সুব্রত দাস-সহ কয়েক জন ওই টাকা হাতিয়েছে। ব্যাঙ্কের অফিসারদের নামও জড়ায়। সিআইডি ভক্তকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। জানা যায়, অভিযুক্তরা ছাড়াও কয়েক জনের অ্যাকাউন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই টাকা জমা পড়ে। তার পরিমাণ ৩১ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৯০ টাকা। অ্যাকাউন্টগুলি ‘ফ্রিজ’ করে সিআইডি। পরে আদালত অ্যাকাউন্টগুলি ব্যক্তিগত বন্ড দিয়ে ‘ডি-ফ্রিজ’ করার অনুমতি দেয়।
আইনজীবীদের প্রশ্ন ছিল, তাঁদের মক্কেলের কাছে জমা হওয়া টাকা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের, তার প্রমাণ কী? সিজেএম জানিয়েছেন, তদন্তে কোন কোন অ্যাকাউন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা জমা পড়েছে তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীর দাবি, “এক অভিযুক্তের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গিয়েছে। যাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে তাঁরা অভিযুক্তের আত্মীয়।”