কলকাতায় ডেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে বীরভূম জেলা তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা কোর কমিটির সদস্যদেরও একসঙ্গে চলার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তার পরেও জেলায় প্রায়ই গোষ্ঠী-বিবাদের ঘটনা সামনে আসছে। রবিবার বোলপুরে জেলা কমিটির বৈঠকেও ‘সমন্বয়ের অভাব’ সামনে এল। দলের নিচুতলার অনেক নেতাই এ দিনের বৈঠকে ডাক না পাওয়ায় আসতে পারেননি বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি।
জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল ও জেলা সভাধিপতি কাজল শেখকে সতর্ক করে দুই শিবিরের যাবতীয় দ্বন্দ্ব দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মিটিয়ে নিতে বলেছে বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি। কিন্তু এরপরেও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব মেটেনি বলে দলের একাংশের অভিযোগ। এই আবহে রবিবার বিকেলে কেষ্টর খাসতালুক বোলপুরে কোর কমিটির তত্ত্বাবধানে বৈঠকে নজর ছিল। বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে বসে ওই জেলা কমিটির বৈঠক। এ দিনের বৈঠকে কেষ্ট, কাজল দু’জনেই হাজির ছিলেন। সাংসদ শতাব্দী রায় ছাড়া এ দিনের বৈঠকে বাকি কোর কমিটির ৮ জন সদস্য সহ দলের বিধায়ক, ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি সহ জেলা নেতৃত্বকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। কিন্তু দলের অন্দরে দ্বন্দ্ব কতখানি মিটল তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে বলে মত দলের অনেকের।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন মূলত একুশে জুলাই নিয়েই আলোচনা হয়। তবে আগের মত ব্লক সভাপতিদের কত করে লোক নিয়ে যেতে হবে তার লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়নি। দলীয় কর্মীরা একুশে জুলাই কলকাতায় কী ভাবে যাবেন সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এমনকি এ দিনের বৈঠক সম্বন্ধেও অনেকের কাছে ঠিক মতো বার্তা পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ নিচুতলার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। সে কারণে অনেকে উপস্থিতও থাকতে পারেনি। এই ঘটনায় অনেকেই দলের মধ্যে ‘সমন্বয়ের অভাব’ হচ্ছে কি না সেই প্রশ্নও তুলছেন।
সম্প্রতি বীরভূমে একাধিক জায়গায় কেষ্ট-অনুগামীরা আক্রান্ত হয়েছেন। হাতিয়ায় বোমা বিস্ফোরণ, থুপসড়ায় উপপ্রধানের বাড়িতে বোমাবাজিতেও দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছে। তবে সে সব প্রসঙ্গও এ দিন বৈঠকে আলোচনা হয়নি বলে সূত্রের দাবি। বৈঠক শেষে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যে লোকজন নিয়ে যাওয়া হয়, এ বছর একুশে জুলাই তার চেয়ে বেশি লোকজন নিয়ে যাওয়া হবে। আজকের যাঁরা তরুণ প্রজন্ম, তাঁরা অনেকে হয়তো একুশে জুলাই সম্পর্কে জানেন না। এটি প্রচার করার জন্য দলের তরফে দেবাশিস সাহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই মতো সভা, সমিতি দেওয়াল লিখনও শুরু হয়ে গিয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন আয়োজিত হুল দিবসের অনুষ্ঠানে এসআরডিএ চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডলের নাম না থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এটা যারা আমন্ত্রণ করেছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ নিয়ে আশিস বলেন, ‘‘আমাদের দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। দ্বন্দ্ব সংবাদমাধ্যম লাগাচ্ছে, আমরা দ্বন্দ্বহীন।’’ বৈঠক সম্বন্ধে অনেকের জানতে না পারা নিয়ে আশিস বলেন, ‘‘একটি মেসেজের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, তাই অনেকে হয়তো জানতে পারেননি।” অনুব্রত বলেন, “একুশে জুলাই হল আবেগের। তাই একুশে জুলাই যাওয়ার জন্য সবাইকে বার্তা দেওয়া হয়েছে।” এ বিষয়ে এ দিন কাজল কিছু বলতে চাননি।