• পথকুকুরদের মিডডে মিল,প্রশ্ন বহু স্কুলে
    আনন্দবাজার | ৩০ জুন ২০২৫
  • পথকুকুরদের জন্যেও মিডডে মিলের বন্দোবস্ত করতে বলেছে রাজ্য সরকার। কবে থেকে তা চালু করতে হবে, সে ব্যাপারে এখনও কোনও নির্দেশিকা না মিললেও স্বল্প বরাদ্দে কী করে সব দিক সামলানো যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে হুগলির বহু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। একবার খাবার দেওয়া শুরু করলে স্কুলের আশপাশ থেকে বাড়তি কুকুর এসে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও তাঁদের আশঙ্কা।

    গত মাস থেকে স্কুলে উপভোক্তাপিছু মিডডে মিলের বরাদ্দ নামমাত্র বেড়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম পর্যন্ত পড়ুয়াপিছু ছিল ৬টা ১৯ পয়সা। বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছিল ৯টাকা ২৯ পয়সা। বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা ১৭ পয়সা। এ ছাড়া ডাল মাথাপিছু ২০ গ্রাম থেকে বাড়িয়ে হয়েছে ৩০ গ্রাম। সব্জি ৫০ গ্রাম থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ গ্রাম। তেল ৫ গ্রাম থেকে ৭.৫ গ্রাম বাড়ানো হয়েছে।

    কিন্তু এই সামান্য বরাদ্দ বৃদ্ধিতেও সব সামলানো যাচ্ছে না বলে বহু স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি। তাঁদের মতে, একটি ডিমের দামই সাত টাকা। এ ছাড়াও ওই টাকার মধ্যেই কিনতে হয় সব্জি, ডাল, সয়াবিন, পোস্ত, ডিম, তেল-সহ মুদিখানার সামগ্রী এবং গ্যাস সিলিন্ডার। স্কুলের মোট পড়ুয়ার ১৫ শতাংশ খাবে না ধরে নিয়ে ৮৫ শতাংশের জন্য বরাদ্দ হয় সরকারি ভাবে। কিন্তু গ্রামের স্কুলগুলিতে অধিকাংশ দিন ৯০ শতাংশ বা তার বেশি পড়ুয়া মিডডে মিল খায়।

    ফলে, জীবজন্তুর প্রতি সহমর্মিতার পাঠ শেখাতে সরকারি উদ্যোগের প্রশংসা করলেও উদ্বৃত্ত খাবার কোথা থেকে আসবে, সেটাই চিন্তা বহু স্কুলের শিক্ষকদের। ছাত্রছাত্রীদের উচ্ছিষ্টও খুব বেশি মিলবে না বলে তাঁরা মনে করছেন। এক প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘বিষয়টি সরকারি স্তরে যে ভাবে বলা হচ্ছে, বাস্তব ততটা সহজ নয়। এমনিতেই সামান্য বরাদ্দে পড়ুয়াদের মিডডে মিল খাওয়াতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।’’ আরামবাগের তেলুয়া শিক্ষাসদনের প্রধান শিক্ষক কুন্তল ঘোষাল বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের উচ্ছিষ্ট কমই থাকে। খাবার দেওয়া শুরু করলে ক্রমশ কুকুরের পাল চলে আসবে। পড়ুয়াদের কামড়ে-আঁচড়ে দিলে দায়ভার কে নেবে? এটা কার্যকর করার আগে সরকারি ভাবে কুকুরের থেকে জলাতঙ্ক-সহ যে সব রোগ ছড়াতে পারে, তার টিকাকরণ জরুরি।’’

    অনেকটা একই সুরে আরামবাগ গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাজশ্রী দে বলেন, ‘‘মিডডে মিলের উচ্ছিষ্ট হয়তো কিছু থাকে। কিন্তু কুকুরদের খাওয়ানোর যথাযথ পরিকাঠামো (টিকাকরণ, বিশেষ ভাবে বেড়া দিয়ে ঘেরা জায়গা ইত্যাদি) সরকারি তরফে গড়ে না দিলে আমাদের পক্ষে এই প্রকল্প রূপায়ণ করা মোটেই সম্ভব নয়।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)