আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদের ভাষা আবার ফিরে এল কসবার আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায়। আর জি করের ঘটনায় যেমন দেখা গিয়েছিল একের পর এক মশাল মিছিল, নাগরিক সমাজের মিছিল— সে রকম ভাবেই আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে আয়োজিত হল নাগরিক সমাজের মশাল মিছিল। রবিবার গড়িয়াহাট থেকে শুরু হওয়া এই মিছিলে ফের আওয়াজ উঠল, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
স্লোগান উঠল, ‘‘এক হয়েছে জনগণ, ভয় পেয়েছে প্রশাসন।’’ ‘‘ধর্ষকদের চিনে নিন, এই মাটিতে কবর দিন।’’ গড়িয়াহাট মোড়ে মশাল হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েক জন কলেজছাত্রী। একে অন্যকে মশাল ধরতে সাহায্য করছিলেন তাঁরা। জানালেন, প্রতিবাদের ভাষা এ ভাবেই মশাল হয়ে জ্বলবে। আর জি কর কাণ্ডে প্রতিবাদেও তাঁরা ছিলেন রাস্তায়। এখানেও আছেন। ভয় না পেয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পক্ষে তাঁরা। রাজ্য জুড়ে যে দুর্বৃত্তায়ন চলছে, তা বন্ধ করতে হবে।
এ দিনের মশাল মিছিল এগিয়ে যায় গড়িয়াহাট থেকে হাজরা মোড়ের দিকে। অধিকাংশ মানুষের বুকে লেখা, ‘‘অভয় থেকে তামান্না, আর কত দেখব মায়ের কান্না?’’ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরসের (পশ্চিমবঙ্গ) আয়োজনে শহরের বহু প্রতিবাদী নাগরিক এই মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। হুইলচেয়ারে বসা প্রতিবন্ধী প্রবীর সাহা বলেন, ‘‘আর জি কর কাণ্ডে পথে নেমে প্রতিবাদ করেছি, এখানেও করছি। যত দিন না বিচার হচ্ছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করব।’’
কিন্তু লাগাতার প্রতিবাদ সত্ত্বেও শহরে বার বার একই ঘটনা ঘটছে। তাই পথে নেমে প্রতিবাদই উপায়, এমনই মনে করছে মিছিলে অংশ নেওয়া নাগরিক সমাজ। অংশগ্রহণকারীদের কয়েক জন মনে করেন, ‘‘মানুষ এখন দিকে দিকে প্রতিবাদ করছেন। তাই এখন অনেক অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন প্রকাশ্যে আসছে। কসবা কাণ্ডের শিকার মেয়েটি ভয় না পেয়ে প্রতিবাদ করেছেন। ভয়কে জয় করে মেয়েটি অভিযোগ করেছেন। তাই ঘটনার কথা জানাজানি হয়েছে।
তবে মিছিলে অংশ নেওয়া কয়েক জনের মতে, কসবা কাণ্ডে তিন জনকে গ্রেফতারই যথেষ্ট নয়। ক্ষমতায় যাঁরা আছেন, তাঁদের সরাতে হবে। কারণ ক্ষমতায় থেকে এঁরা এতই বেপরোয়া ও নিশ্চিত যে ধরেই নেয়, ধর্ষণ করেও পার পাওয়া যাবে। তাই কসবা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ঘটনা ঘটিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে যেতে পেরেছিল। ক্ষমতায় এই দুর্বৃত্তেরা যত দিন থাকবে, এ রকম ঘটনা বার বার ঘটবে। তাই এদের সমূলে উৎপাটন করা আবশ্যিক। কিন্তু সেটা হবে কী ভাবে? উত্তর নেই।
আর তাই কসবা কাণ্ডে তিন জন গ্রেফতার হলেও মোটেও স্বস্তি পারছেন না আন্দোলনরত কলেজছাত্রীরা। যেমন দেবস্মিতা নামে এক কলেজছাত্রী বলেন, ‘‘এই শহরেরই একটি কলেজে পড়ি। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? সব থেকে সুরক্ষিত স্থান যেটা হওয়া উচিত, সেটাই অসুরক্ষিত! প্রথমে হাসপাতালে, তার পরে কলেজে! এর থেকে লজ্জার কী হতে পারে?’’
এ দিনের নাগরিক মিছিল থেকে ফের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠল। প্রশ্ন উঠল, একের পর এক ঘৃণ্য ঘটনা ঘটছে, অথচ কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই প্রশাসনের? উপস্থিত অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় অরাজকতা চরমে উঠেছে। অবিলম্বে দরকার ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ।
গড়িয়াহাট থেকে শুরু হওয়া নাগরিক সমাজের মশাল মিছিল এ দিন লেক মার্কেটের কাছে আটকে দেয় পুলিশ। মিছিল যাওয়ার কথা ছিল হাজরা মোড় পর্যন্ত। আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশকে তাঁরা চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে হাজরা পর্যন্ত মিছিল যাবে। কিন্তু কেন মিছিল আটকানো হল, জবাব দিতে পারছে না পুলিশ। এ দিকে মিছিল আটকে দেওয়ায় আন্দোলনকারী কয়েক জনকে রাস্তায় বসে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। তবে তাঁরা ব্যারিকেড ভাঙবেন নাবলে জানান। এর মধ্যে শুরু হয় বৃষ্টি। কেউ ছাতা মাথায়, কেউ বৃষ্টিতে ভিজেই প্রতিবাদ চালিয়ে যান।
বাতাসে ভাসল সেই স্লোগান, ‘‘অভয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’’, ‘‘অভয়ার রক্তচোখ, আমার লাঠির মশাল হোক।’’ আন্দোলনকারীরা জানালেন, ৯ অগস্ট অভয়ার বর্ষপূর্তিতে হাজরা মোড়ে তাঁরা প্রতিবাদে নামবেন।