এই সময়: জেগে উঠছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলো। ফেসবুক গ্রুপগুলোতেও তৎপরতা বেড়েছে। ফেসবুক রিলে উঁকি মারছে অরিজিৎ সিং-এর ‘আর কবে, আর কবে...।’
ঠিক ১০ মাস আগের কথা। আরজি কর আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল শহর কলকাতা। পথে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান উঠেছিল। এমন তীব্র নাগরিক আন্দোলন দেখে বঙ্গের পোড়খাওয়া রাজনীতিকরাও হতবাক হয়েছিলেন।
যদিও পরে নানা কারণে সেই আন্দোলন খেই হারায়। উৎসাহ হারান প্রতিবাদ মিছিলের সামনের সারিতে থাকা নাগরিক মুখগুলি। কোনও মতে টিকে ছিল শুধু আন্দোলনকারীদের তৈরি করা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ।
সেখানে কেউ কেউ হয়তো পোস্ট করতেন, ‘আরজি কর–এর নির্যাতিতা কি সত্যি–ই বিচার পাবে না?’ জবাবে কেউ কান্নার ইমোজি দিতেন, কেউ বা রাগের। এখানেই শেষ।
ঝিমিয়ে পড়া সেই প্রতিবাদী গ্রুপগুলো আবার নড়েচড়ে বসেছে। আবার সেখানে প্রতিবাদের সুর চড়তে শুরু করেছে। আওয়াজ উঠছে, ‘আরজি কর–এর পরে এ বার দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজ। আর কবে, আর কবে...!’
আরজি কর-পর্বে নারগিক সমাজের সেই আন্দোলনের ধারে কাছেও যেতে পারেননি দলীয় পতাকার তলায় থাকা আন্দোলনকারীরা। আরজি কর–এর ঘটনার বিচার চেয়ে মিছিল সামনে থেকে যাঁরা স্লোগান তুলতেন, তাঁরা কেউ গৃহবধূ, কেউ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, কেউ আবার বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
তাঁদের অনেকেরই রাজনীতির সামান্য অভিজ্ঞতাটুকুও ছিল না। তবুও তাঁদের তোলা স্লোগানেই কেঁপে উঠেছিল দুঁদে রাজনীতিকদের ছকে বাঁধা আন্দোলনের রীতিনীতি। সেই ছকভাঙা আন্দোলনকারীরা কি ফের জোটবদ্ধ হতে শুরু করেছেন?
অন্তত তাঁদের হাতে তৈরি হওয়া সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপগুলো থেকে তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। কারণ, গত দু’দিনে দক্ষিণ কলকাতার এক আইন কলেজের ধর্ষণের ঘটনার বিচার চেয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ পোস্ট হতে শুরু করেছে সেখানে। গ্রুপের সদস্যদের অনেকেই চাইছেন আবার পথে নামতে। আবার ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তুলতে। আবার রাত দখল করতে।
আরজি কর-এর ঘটনার প্রতিবাদে গত বছরের ১৪ অগস্ট ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচির ডাক দিয়ে সবার নজর করেছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী রিমঝিম সিনহা। ওই রাতে শুধু কলকাতা নয়, বাংলা জুড়ে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে বিচার চেয়েছিল।
রবিবার সেই রিমিঝিমের ডাকেই নাগরিক সমাজের একাংশ কসবা থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। অনেক দিন পরে আবার কলকাতার রাজপথে স্লোগান ওঠে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’
আরজি কর–পর্বে টানা এক মাস নিয়ম করে কোনও না কোনও মিছিলে হেঁটেছিলেন বারাসতের কলেজ পড়ুয়া শ্রাবন্তী ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘আরজি কর-এর ঘটনার পর থেকে আমি বেশ কিছু প্রতিবাদী সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের সদস্য।
কোনওটার নাম ‘তিলোত্তমার বিচার চাই’, কোনওটা ‘অভয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। ওই গ্রুপগুলি গত বেশ কিছু মাস প্রায় চুপচাপ ছিল। আইন কলেজের ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনার পরে ওই গ্রুপগুলিতে সবাই আবার গর্জে উঠতে শুরু করেছেন।’
উত্তর কলকাতার বাসিন্দা তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রয়োজনে আবার পতাকাহীন মিছিলে হাঁটব। বুঝিয়ে দিতে হবে সাধারণ মানুষ রাজপথ ছাড়েনি।’
‘অভয়া মঞ্চ’–র ডাকে রবিবার রাজপথে নেমেছিল নাগরিক সমাজের একাংশ। গড়িয়াহাট থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিল হয়। সেখানে আরজি কর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের অনেককেই দেখা গিয়েছে। মিছিলে হাঁটেন শ্রীলেখা মিত্র, বাদশা মৈত্র, চন্দন সেনের মতো আরও অনেকে।
সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ—পথটা কিন্তু কম নয়। পথে কি আবার নামবে সাধারণ মানুষ। উত্তর দেবে সময়ই।