এই সময়, আলিপুরদুয়ার: তিনটি লাঠি দিয়ে মারধর। মারের চোটে ভেঙে যায় লাঠি। তাতেও রাগ কমেনি প্রধান শিক্ষকের!
এর পরে নারকেল পাতার কাঠি দিয়ে দুই হাতের তালু খুঁচিয়ে দেওয়া হয়! মারের চোটে কাঁদছিল ছেলেটি, তবু মার থামাননি তিনি।
এমনই অভিযোগ একটি আবাসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বর্বরোচিত মারধরের শিকার হয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রটি শয্যাশায়ী। নিজের অপরাধ কবুল করেছেন প্রধান শিক্ষক দীপক ঘোষ।
অভিযুক্তের দাবি, তাঁর পকেট থেকে শিশুটি টাকা চুরি করেছিল বলে তিনি মারধর করেছেন। অভিযোগ পেয়ে মাদারিহাটের পুলিশ দীপককে গ্রেপ্তার করেছে।
মাদারিহাটের উত্তর শিশুবাড়ি ভগৎপাড়ায় বাহাদুর ভগৎ সারদা শিশুমন্দির আবাসিক স্কুল। বেসরকারি এই স্কুলে পড়াশোনা করে বছর নয়েকের ছেলেটি। তার বাবা-মা দু'জনেই চা শ্রমিক। দু’বছর আগে তাঁরা ছেলেকে এই আবাসিক স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। সপ্তাহ শেষ হয়ে এলে ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসতেন তার বাবা।
এ বার শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসার পরেই প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানা নেয় সে। ছাত্রের বাবা বলেন, ‘স্কুলে গরমের ছুটি ঘোষণার পরে শুক্রবার বিকেলে ছেলেকে আনতে গিয়েছিলাম। তখন দেখলাম ও খুঁড়িয়ে হাঁটছে। আর ওর সারা শরীরের যন্ত্রণা হচ্ছে। ঠিক মতো কথাও বলতে পারছে না। কী হয়েছে জানতে চাইলে জামা খুলে কোমর ও পিঠ আমাকে দেখায়।’
ছেলের শরীরের আঘাত দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান বাবা। লাঠির ঘায়ে পিঠ, পা, হাত ও তালুতে কালশিটে পড়ে গিয়েছে। ছেলের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন, টাকা চুরির অপবাদে নাবালককে প্রধান শিক্ষক মারধর করেছেন।
এমনকী তার গোপনাঙ্গে খারাপ ভাবে আঘাত করা হয়েছে। আপাতত চিকিৎসকের পরামর্শে ওই পড়ুয়ার কোমরে বেল্ট বেঁধে রাখা হয়েছে। হাঁটা তো দূরের কথা, এখন ঠিক মতো বসতেও পারছে না শিশুটি।
প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, ওই ছাত্রটি তাঁর টাকা চুরি করেছিল। টাকা আদায়ের জন্য দু’দিন ধরে তার উপরে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগ, ছাত্রকে পিটিয়ে তিনটি লাঠি পর্যন্ত ভেঙে ফেলেন ওই শিক্ষক। এখানেই অত্যাচারের শেষ নয়। নারকেল পাতার শুকনো কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে দুই হাতের তালু পর্যন্ত ফুটো করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিশুটির বাবা মাদারিহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তার পরেই পুলিশ তাঁকে পাকড়াও করে। জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই শিশুর বাবা। আমরা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে তদন্ত চালাচ্ছি। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রধান শিক্ষক নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই আমার পকেট থেকে টাকা চুরি হচ্ছিল। ওই ছাত্রের প্রতি সন্দেহ হয়। শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হয়ে যায়, ওই ছাত্র টাকা চুরি করেছে। সে জন্য শাসন করেছি। তবে অত্যাচার যে মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে তা বুঝতে পারিনি। আমি ওই ছাত্রের চিকিৎসার খরচ দেবো।’
আবাসিক স্কুলের একটি ক্যাম্পাসের মধ্যে ছাত্র ও শিক্ষকদের বসবাসের ব্যবস্থা। প্রধান শিক্ষকের দাবি, তাঁর অনুপস্থিতিতে ঘরে ঢুকে পড়ুয়া টাকা চুরি করেছে। তিনি ব্যবহার করা জামা খুলে ঘরে রাখেন।
জামার পকেটে টাকা রাখা থাকে। সেখান থেকে টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছিল। তবে তিনি কী ভাবে নিশ্চিত হলেন, ওই ছাত্রই চুরি করেছে? এ প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি দীপকের কাছ থেকে।