কসবাকাণ্ডে অভিযুক্তদের ‘কল রেকর্ড’ ঘেঁটে দেখছে পুলিশ
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০১ জুলাই ২০২৫
২৫ জুন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০টা ৫০। দক্ষিণ কলকাতার নামী আইন কলেজে এই সময়ের মধ্যেই ঘটে যায় ন্যক্কারজনক ঘটনা। কলেজের এক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। মূল অভিযুক্ত ধর্ষণ করেন। আর বাকি দু’জন সেই কাজে সাহায্য করেন। ইতিমধ্যেই ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ ওই দিনের সাড়ে সাত ঘণ্টার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। আপাতত তদন্তকারীদের নজর তিন অভিযুক্তের ফোন কলের নথিতে। ওই রাতে কাদের ফোন করেছিলেন অভিযুক্তরা, কী কথা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে, আপাতত সেই সব খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দিন রাতে তিনজনের ফোন থেকে কার কার কাছে ফোন গিয়েছে, কত ক্ষণ কথা হয়েছে, সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখা হবে। আপাতত সংশ্লিষ্ট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছে ফোন কলের বিস্তারিত নথি চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। এই নথি হাতে পেলে তদন্তে অনেকটাই সুবিধা হবে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনার তদন্তে কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) প্রদীপকুমার ঘোষালের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। প্রথমে সিটের সদস্যসংখ্যা ছিল পাঁচ জন। পরে তা বাড়িয়ে ন’জন করা হয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সেক্রেটারি পদের লোভ দেখিয়ে অনেক মেয়েকেই ‘টোপ’ দিতেন মূল অভিযুক্ত। এ ক্ষেত্রেই সেটাই করেছিলেন। অভিযোগ, প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদেরই ‘টার্গেট’ করা হত। কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্যরা তিন অভিযুক্তের বাড়িতেই গিয়েছিল। সেখান থেকে নানা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মূল অভিযুক্ত ‘এম’-এর বাড়ি থেকে সেই পোশাকগুলিই পাওয়া গিয়েছে, যেগুলি তিনি ঘটনার সময়ে পরেছিলেন। সিসি ক্যামেরায় ওই পোশাক পরে থাকতে তাঁকে দেখা গিয়েছে।
এই পোশাকগুলি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তদের ফোন আগেই বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তাঁরা মোবাইল ছাড়া অন্য কোনও বৈদ্যুতিন গ্যাজেট ব্যবহার করেন কি না, তার খোঁজও করা হয়েছে। সূত্রের খবর, সিটকে তরুণী জানিয়েছেন, রক্ষীর ঘরে যখন তাঁকে ধর্ষণ করা হচ্ছিল, তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছিল। তারপরেও থামেননি অভিযুক্ত। নির্যাতিতার দাবি, পুলিশের কাছে গেলে প্রেমিককে খুন করিয়ে দেওয়া হবে এবং বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন অভিযুক্তেরা।
সিটের তদন্তকারী এক অফিসার বলেছেন, ‘ঘটনাপ্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মূল অভিযুক্ত নির্যাতিতাকে নির্যাতন করেছে। পারিপার্শ্বিক তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযোগটি প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এটি পূর্বপরিকল্পিত অপরাধ কিনা, তা প্রমাণ করতে হবে।’