• প্রবীণ সিপিএম নেতাকে রাস্তায় ফেলে মার তৃণমূল নেত্রীর, ‘নিন্দনীয় ঘটনা’, বলে শোকজ দলের
    প্রতিদিন | ০১ জুলাই ২০২৫
  • অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: রেলশহর খড়গপুরের প্রবীণ বামপন্থী নেতাকে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে মারধর! কাঠগড়ায় তৃণমূল নেত্রী ও তাঁর অনুগামীরা। শুধু মারধর নয়, তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়ে গোটা গায়ে কাপড় কাচার নীল রঙ ও একটি দোকান থেকে দেওয়াল রং করার সাদা রং নিয়ে এসে ঢেলে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকালে খড়গপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফটকবাজার এলাকার একটি হনুমান মন্দিরের উলটোদিকের মালঞ্চ রোডে। এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই নিন্দার ঝড়। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে কড়া শাস্তির দাবি উঠছে। কঠোর পদক্ষেপ করেছে তৃণমূলও। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত নেত্রীকে শোকজ করেছে জেলা নেতৃত্ব।

    নিগৃহীত নেতা অনিল ওরফে ভীম দাস ‘আমরা বামপন্থী -খড়গপুরে’র সম্পাদক। তিনি খড়গপুর টাউন থানায় মারধরে জড়িত বেবি কোলে শর্মা-সহ তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি মালঞ্চ রোডের ধারে অবস্থিত রংয়ের দোকানের মালিক কমল জৈন পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, দোকান থেকে জোর করে সাদা রংয়ের একটি টিন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

    এদিন বিকেলে তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা অভিযুক্ত নেত্রীকে শোকজ করে তিনদিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও অভিযুক্ত তৃণমূল নেত্রী এই ঘটনার পক্ষে সাফাই দিয়ে বলেন, “দু’জায়গায় কাজ করে দেওয়ার নামে আমার অনুগামী তিনজন মহিলার কাছ থেকে অনিল দাস ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ করেননি। আবার টাকাও ফেরত দেন নি।” তবে এসব ঘটনা কবে কোথায়, কীভাবে হয়েছে তার কোনও সদুত্তর বেবী কোলে শর্মা দিতে পারেননি। এমনকি দলকেও এইসব বিষয়ে জানাননি বলে জানিয়েছেন এই তৃণমূল নেত্রী।

    মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়া অনিল দাস বর্তমানে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। তিনি জানিয়েছেন,সকালে তিনি খড়িদা রেলগেটের দিক থেকে যাচ্ছিলেন। রাস্তার মাঝে হনুমান মন্দিরের সামনে তাঁকে আটকান বেবি ও তাঁর দলবল। তারপরই মারধর শুরু করে। তাঁর আরও দাবি, মারতে মারতে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার পর এক অনুগামীকে ভোজালি নিয়ে আসার নির্দেশ দেয় বেবি। ভয়ে সামনের একটি রঙ বিক্রির দোকানে ঢুকে পড়েন অনিল। সেখানে বেবির এক অনুগামী ঢুকে জোর করে রঙের একটি কৌটো দোকানের ভিতর থেকে নিয়ে মাথায় আঘাত করে। তাতে রং গায়ে মাখামাখি হয়ে যায়। অনিলের সাফ অভিযোগ, “আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে।” এদিকে ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সিপিএমের খড়গপুর শহর পশ্চিম এরিয়া কমিটির সম্পাদক মধুসূদন রায় বলেন, “ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। ভাবতে পারছি না শহরের এক প্রবীণ নেতাকে এইভাবে মারধর করা হল। আমরা চাই অভিযুক্তদের শুধু গ্ৰেপ্তার করা নয়। কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কারণ এইধরনের ঘটনা অতীতে খড়গপুর শহরে কখনও হয়নি।”

    এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে থানায় গিয়ে অনিল দাসের সঙ্গে দেখা করতে যান খড়গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বর্তমান কাউন্সিলর প্রদীপ সরকার। তিনি বলেন, “অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। ভীমদার সঙ্গে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য কাজ করেন। তাঁকে এইভাবে নিগ্ৰহ করা ঠিক হয়নি।” অপরদিকে তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “খড়গপুর শহরে আজ সকালে যে ঘটনা অর্থাৎ বেবি কোলে শর্মা বলে একজন মহিলা, একজন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ যাকে ভীম বলে সবাই চেনেন। তাঁকে যেভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর করে গায়ে কালি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে, আমি ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বেবি কোলে শর্মার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা প্রশাসনস্তরে নেওয়া হয় তারও দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে আরও যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এঁর পাশে আমাদের দল নেই।”
    ঘটনার সমালোচনা করে খড়গপুরের পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁরা ঠিক করেননি। প্রশাসনের দেখা উচিত।”

    উল্লেখ্য, খড়গপুর শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বেবি কোলে শর্মা। আগে বিজেপিতে ছিলেন। ২০২২ সালে পুরসভা নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তারপর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ। এদিকে জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বললেন ” দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তবে বেবী কোলে শর্মাকে অবিলম্বে গ্ৰেপ্তারের দাবিতে সমাজমাধ্যম ছেয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের অনেকেও বেবিকে গ্ৰেপ্তারের দাবিতে সরব হয়েছেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)