• চিংড়ি চাষে মিলবে উপকার, নতুন ব্যাকটেরিওফাজ আবিষ্কার মেদিনীপুরের গবেষকদের
    এই সময় | ০১ জুলাই ২০২৫
  • মেদিনীপুরের কলেজের ল্যাবে আবিষ্কৃত হলো নতুন ব্যাকটেরিওফাজ। ভাইরাসের শ্রেণিবিন্যাস সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কমিটি এটিকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। চিংড়ি চাষে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে নতুন প্রজাতির এই ব্যাকটেরিওফাজ বলে দাবি করছেন গবেষকরা।

    মেদিনীপুর সিটি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল তথা মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কুন্তল ঘোষ জানালেন, সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্স (WGS) বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে, এই ব্যাকটেরিওফাজ (AHPMCC7) আফুনাভাইরাস গণের একটি নতুন প্রজাতি। চলতি বছরই (২০২৫ সালে) ভাইরাসের শ্রেণিবিন্যাস সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কমিটি (ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ট্যাক্সোনমি অফ ভাইরাসেস বা ICTV) গবেষণাগারে প্রাপ্ত ভাইরাসের এই প্রজাতিটিকে 'নতুন প্রজাতি' হিসেবে মান্যতা দিয়েছে এবং তাঁদের ডেটাবেসে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

    বছর দুয়েক আগে নালা-নর্দমার জল থেকে সংগৃহীত হয়েছিল নমুনা। সেই নমুনা থেকেই কলেজের মাইক্রোবায়োলজি গবেষণাগারে ব্যাকটেরিওফাজ (Bacteriophage)- এর এই নতুন প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়। মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে ভাদুতলাতে অবস্থিত মেদিনীপুর সিটি কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী কুন্তল ঘোষের প্রচেষ্টায় ২০২৩ সালেই আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ভাইরোলজি’ (Virology)-তে জায়গা করে নিয়েছিল সেই গবেষণা। এই গবেষণাকর্মে ড. ঘোষের মূল সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাঁর অধীনে গবেষণারত ছাত্রী স্মিতা ঘোষ।

    তাঁদের দ্বারা চিহ্নিত এই ব্যাকটেরিওফাজটির নামকরণ করা হয়েছিল AHPMCC7। এরপর থেকে টানা প্রায় দু’বছর ধরে মেদিনীপুর সিটি কলেজের ওই গবেষকদল ব্যাকটেরিওফাজটি নিয়ে নানা গবেষণা চালান। তাতেই ধরা পড়ে, ব্যাকটেরিওফাজটি মাল্টি ড্রাগ প্রতিরোধী ‘অ্যারোমোনাস হাইড্রোফিলা’ নামক ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে।

    ‘অ্যারোমোনাস হাইড্রোফিলা’ নামক এই ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া চিংড়ির শরীরে লিটোপেনিয়াস ভেনামি রোগ সৃষ্টি করে। ভেড়িতে চিংড়ির অত্যধিক হারে মৃত্যুর জন্যও এই ব্যাকটেরিয়া দায়ী। নতুন আবিষ্কৃত এই ব্যাকটেরিওফাজের প্রয়োগে চিংড়ির মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন মেদিনীপুর সিটি কলেজের গবেষক তথা বিজ্ঞানীরা। ফলে চিংড়ির শরীরে কোনও ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই বলেও জানান অধ্যাপক-বিজ্ঞানী কুন্তল ঘোষ। এর ফলে চিংড়ি চাষ ও ব্যবসায় এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

    ড. ঘোষ বলেন, ‘অ্যারোমোনাস হাইড্রোফিলা নামক ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে চিংড়িকে বাঁচাতে নানা অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হয়। এর ফলে অনেক সময় বিদেশে চিংড়ি রপ্তানিতে সমস্যা হয়। বেশ কিছু দেশ এই অ্যান্টিবায়োটিক থাকা চিংড়ি গ্রহণ করে না। কিন্তু, আমাদের আবিষ্কৃত নতুন এই ব্যাকটেরিওফাজ জলে ফেলে দিলে তা প্রাকৃতিক উপায়েই ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে পারে।’

    বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এই কলেজের কর্ণধার অধ্যাপক প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের মহাবিদ্যালয়ের গবেষণাগারে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সত্যিই সাফল্যের। এই ধরনের ব্যাকটেরিওফাজ চিংড়ি চাষে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে সক্ষম বলেই আমরা মনে করছি।’

  • Link to this news (এই সময়)