বিমানবন্দরেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লি গেল বিজেপি ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’! রিপোর্ট দেবে নড্ডাকে
আনন্দবাজার | ৩০ জুন ২০২৫
দমদম বিমানবন্দরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লি ফিরে গেল বিজেপির ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ ছাত্রীধর্ষণের ঘটনার পর বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার নির্দেশে সোমবার কলকাতায় এসেছিল বিজেপির 'তথ্যানুসন্ধানী দল’। হুল দিবস উপলক্ষে পশ্চিম মেদিনীপুরে একাধিক কর্মসূচি থাকায় তাদের সঙ্গে দিনভরের কর্মসূচিতে থাকতে পারেননি বিরোধী দলনেতা। তাই দিল্লি রওনা হওয়ার আগে বিমানবন্দরেই কমিটির চার সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকে তাঁর সঙ্গী ছিলেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্র পাল। বিজেপি সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে নারী সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে—এই ইস্যুতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সরব হতে বলেছেন শুভেন্দু। বৈঠকে রাজ্যে নারীদের উপর অত্যাচার ও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানান তিনি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপির মহিলা কর্মীরা লাগাতার অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে। সম্প্রতি কসবায় আইন কলেজে ছাত্রীধর্ষণ এবং কালীগঞ্জে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় কিশোরী নিহত হওয়ার ঘটনাও বৈঠকে তোলেন তিনি। এসব ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নিয়েও মতামত জানান শুভেন্দু।
বৈঠক শেষে বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যেরা দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন। তারা রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার হাতে তুলে দেবেন বলে জানা গেছে। বিজেপির ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’টি রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার নিজেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার প্রেরিত দলটিকে নিয়ে সোমবার দেখা করেন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার সঙ্গে। লালবাজারে প্রায় ৪৫ মিনিট কাটালেন তাঁরা। কলেজগুলিতে প্রাক্তনীদেরও অবাধ গতিবিধি কেন? পুলিশ কমিশনারকে সে প্রশ্ন করলেন দেশের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিজে। তবে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে অসন্তোষ প্রকাশ করেননি সুকান্তেরা। কারণ ধৃতদের সাজা হবেই, সে বিষয়ে কমিশনার বর্মা আশ্বস্ত করেছেন সুকান্ত-সহ গোটা ‘তথ্যানুসন্ধানী দল’কে।
প্রসঙ্গত, শনিবার হঠাৎ দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। ফিরে তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সংগঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যদিও সেই বৈঠকের বিস্তারিত কিছু তিনি জানাননি। তবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সঙ্গে নিজের বৈঠক প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘বিজেপি নেতাকর্মীদের ওপর তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকারের পুলিশ অত্যাচার তো করছেই এখন আরও দু’টি ক্ষেত্রকে বেছে নেওয়া হয়েছে অত্যাচারের জন্য। আমি এই সমস্ত বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের কাছে বলেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যতগুলো সংবিধানিক বডি পশ্চিমবঙ্গে এসেছে যেমন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় মহিলা কমিশন, তপসিলি জাতি উপজাতি কমিশন, মাইনরিটি কমিশন। রাজ্য সরকার এদের প্রত্যেককে ইগনোর করেছে। এমনকি তাদের দেওয়া পরামর্শ গ্রহণ করেনি।’’
শুভেন্দু বলেন, "সাংসদ থাকাকালীন অর্জুন সিংহকে যখন পুলিশ কর্তা অজয় ঠাকুর, অমরনাথেরা শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেছিল তখন সংসদের স্বাধিকারভঙ্গ কমিটি তাঁদের তলব করলেও পুলিশ সুপার বা আইপিএস অফিসারেরা যাননি। সেই একই ঘটনা ঘটেছে সুকান্ত মজুমদারের ক্ষেত্রেও। তিনি শুধু সাংসদ নন, একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। তিনিও সংসদের স্বাধিকারভঙ্গ কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন। এই রাজ্য সরকার কোন সংসদীয় রীতিনীতি বা সংবিধান মানে না। কোনও প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয় না। এই বিষয়গুলো আপনারা কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাবেন।’’