• ‘এ বার আমাদের মারবে বলছে’! বিমানের কাছে অনুযোগ তমন্নার মায়ের, কালীগঞ্জে উদ্ধার বোমাও
    আনন্দবাজার | ৩০ জুন ২০২৫
  • বাম প্রতিনিধিদলের কাছে ভেঙে পড়লেন নদিয়ার কালীগঞ্জে বিস্ফোরণে হত কিশোরীর মা। অভিযোগ করলেন, প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। প্রতিনিধিদলে থাকা সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কাছে মৃতা তমন্না খাতুনের মা সাবিনা বিবি জানান, তাঁদের খুন করা হবে বলে ফোনে মেসেজ পর্যন্ত আসছে। সব শোনার পরে বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, অভিযুক্তদের গ্রেফতারির পরেও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে ওই পরিবার। এর মধ্যে সোমবার এলাকা থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।

    সোমবার কালীগঞ্জের বড় চাঁদঘর গ্রামপঞ্চায়েতের মোলান্দি গ্রামে তমন্নার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান বিমানরা। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের কাছে গত ২৩ জুনের ঘটনার বিবরণ দেন সাবিনা। কী ভাবে তাঁর চোখের সামনে মেয়ে ‘খুন’ হয়েছে, কান্নাভেজা গলায় সেই কথা শোনান ওই মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ের খুনিদের যেন ফাঁসির সাজা হয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘ছোট মেয়েটাকে মারতে এক বারও ভাবল না। এখন হুমকি আসছে, ‘এ বার তোকে মারব’ বলে। আমার বরকেও (স্বামী) মারব বলছে। ফোনে লিখে (মেসেজ) পাঠাচ্ছে।’’ সাবিনার সংযোজন, ‘‘আমাদের আর হারানোর ভয় নেই। আমাদের মেয়েকে মেরেছে। আমরা বেঁচে থেকে আর কী করব? প্রশাসনকে সবটাই জানিয়েছি।’’

    তমন্নার মায়ের সঙ্গে দেখা করার পর বিমান বলেন, ‘‘ওঁর কাছ থেকে সব শুনলাম। ওঁরা বিচার চাইছেন। কিন্তু বিচার কী করে হবে? ওঁরা ২৪ জনের নাম দিয়েছেন। তার মধ্যে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সকলকে গ্রেফতার করা না-হলেও জিজ্ঞাসাবাদ তো করা যেতে পারত। তার ভিত্তিতে আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করা যেত। মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ বলছে, সে নেই!’’

    সোমবারই মোলান্দি গ্রামের বাসিন্দারা এলাকার পাটের খেত এবং বাঁশবাগান থেকে বালতিভর্তি সকেট বোমা উদ্ধার করেন বলে দাবি করেছেন। পরে ওই বোমাগুলি উদ্ধার করে পুলিশ। নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে সেগুলো। বিস্ফোরক উদ্ধার নিয়ে পুলিশকে নিশানা করে বিমান বলেন, ‘‘তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা চাষের জমিতে শ’য়ে শ’য়ে বোমা লুকিয়ে রেখেছে। বার বার বলা সত্ত্বেও পুলিশ কিছুই করছে না। আজ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেগুলো উদ্ধার করেছে। উদ্ধারের পর তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে পুলিশ।’’

    উল্লেখ্য, প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা আলিফাকে কালীগঞ্জের বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। গত ১৯ জুন ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। গণনা হয় গত সোমবার, ২৩ তারিখ। তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হতেই বিজয়মিছিল বার করেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, একটি বিজয়মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয় সিপিএম কর্মীদের বাড়ি লক্ষ্য করে। সকেট বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তমন্নার। রবিবার সাবিনা বলেছিলেন, “আর ক’টা দিন দেখব। যদি ২৪ জনকেই না ধরা হয়, অস্ত্র উদ্ধার না হয়, তা হলে অনশনে বসব আমি।”

    কিশোরীর মৃত্যুর প্রথম দিন থেকেই সিপিএম নেতৃত্বকে পরিবারের পাশে থাকতে দেখা গিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ একাধিক নেতৃত্ব তমন্নার বাড়িতে গিয়েছেন। সিপিএমের যুব সংগঠনের তরফে পলাশি রেলগেট সংলগ্ন সিনেমা হলের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ হয়। দাবি ওঠে, সমস্ত অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি দিতে হবে। এলাকা থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)