• মালতীপুরে কয়েক কোটির প্রতারণা! ধৃত ১
    বর্তমান | ০১ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, চাঁচল: প্রতিদিন মাত্র একশো টাকা করে জমা দিলেই এক বছরে চড়া সুদের হারে ফেরত দেওয়া হবে। এমন কথা বলে সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও গ্রামের গৃহবধূদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা বলে অভিযোগ। এই সংস্থা মালদহজুড়ে ঠিক কত কোটি টাকা তুলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা।

    তার মধ্যে সংস্থার এক ম্যানেজারকে এলাকায় ধরে পুলিসের হাতে তুলে দিয়েছেন গ্রাহকেরা। তাঁকে গ্রেপ্তার করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। গ্রাহকদের দাবি, সংস্থাটির মূল শাখা ছিল সামসিতে। মালতীপুর সহ জেলায় এরকম আরও পাঁচটি শাখা রয়েছে বলে সূত্রের খবর। কয়েক বছর ধরে ওই সংস্থার ম্যানেজার ও কর্মীরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে বলতেন, প্রতিদিন নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা করলেই এক বছরে ৮ শতাংশ হারে সুদ সহ এককালীন অর্থ ফেরত দেওয়া হবে গ্রাহকদের। ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে কেউ প্রতিদিন ১০০ টাকা, কেউ ২০০ ও ৬০০ টাকা পর্যন্ত জমা দিতেন। তাঁদের মধ্যে কেউ ছোট ব্যবসা চালান, কেউ চা মুড়ির দোকান করেন। 

    কয়েকদিন ধরে অফিস তালাবন্দ দেখে গ্রাহকদের সন্দেহ শুরু হয়। সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও খোঁজ পাননি কেউ। তার মধ্যেই রবিবার রাতে চাঞ্চল্য ছড়ায় মালতীপুর এলাকায়। সংস্থার মালতীপুর শাখার ম্যানেজার সঞ্জীব দাস গোপনে এলাকায় যেতেই তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন গ্রাহকেরা। পরে চাঁচল থানার পুলিস গিয়ে তাঁকে আটক করে আনে।

    সোমবার মালতীপুরের ১৪ জন প্রতারিত গ্রাহক চাঁচল থানায় মালিক সহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ, সামসি রতনপুরের বাসিন্দা সংস্থার মালিক সহ কয়েকজন পরিকল্পিতভাবে প্রতারণা করেছেন। এখন সংস্থার মালিক পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এদিকে সংস্থার সামসি শাখার কর্মীরাও মালিকের বিরুদ্ধে সামসি ফাঁড়িতে অভিযোগ করেছেন। কর্মী আকাশ সাহা ও অচিন্ত্য মণ্ডল বলেন, আমরা বেকার যুবক। সংসার চালানোর জন্য চাকরি নিয়েছিলাম। এখন গ্রাহকেরাই আমাদের ধরছেন। অফিস বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাওয়া হলে মালিক আমাদের ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।

    মালতীপুরের প্রতারিত গ্রাহক আসিফ ইকবাল বলেন, শুধু মালতীপুরেই প্রায় চার কোটি টাকা তোলা হয়েছে। মোট পাঁচ জায়গায় এরকম শাখা ছিল। আমাদের সব টাকা ফেরত দিতে হবে।

    কৃষ্ণগঞ্জের বাসিন্দা মৌসুমী খাতুন বলেন, প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে জমা দিতাম। বলেছিল ম্যাচুরিটি হলে ৮ শতাংশ হারে টাকা ফেরত দেবে। কিন্তু এখন তো সব উধাও। থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।

    মালতীপুরের সুইটি খাতুনের কথায়, এক বছর ধরে ২০০ টাকা করে জমা দিচ্ছিলাম। এক সপ্তাহ পর ম্যাচুরিটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অফিসই বন্ধ হয়ে গেছে। সব শেষ হয়ে গেল।

    চাঁচল থানার পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)