সংবাদদাতা, বালুরঘাট ও তপন: ভোরবেলায় বাড়ির দরজায় ধাক্কাধাক্কি। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই দেখলেন হাতে রামদা নিয়ে দাঁড়িয়ে এক অচেনা যুবক। ধাক্কা মেরে একেবারে ঘরে ঢুকে পড়ল সে। এরপরেই গৃহবধূকে টানতে টানতে কার্যত জোর করেই বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে এগিয়ে যান স্বামী ও মেয়ে। বাধা দেওয়ায় রামদা দেখিয়ে ধাক্কা মেরে স্বামীকে ফেলে স্ত্রীকে টোটোয় বসিয়ে নিয়ে গেল যুবক। স্থানীয়দের ডাকতে ডাকতেই বেপাত্তা সে।
সোমবার সাতসকালে এমন ঘটনায় হইচই পড়ে যায় তপনের মাঝিখণ্ডা গ্রামে। এনিয়ে তপন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিস ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে। সেইসঙ্গে অপহরণকারী যুবককেও গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরেই উঠে আসে আসল ঘটনা। আসলে সবটাই অপহরণের নাটক।
পুলিস সূত্রে খবর, অপহৃত বধূর সঙ্গে অপহরণকারী যুবকের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। বাড়ি থেকে পালাতেই এই নাটকীয় অপহরণের ছক কষে বধূ ও তার প্রেমিক। অপহরণের নাটক করে দু’জন পালিয়েও যায়। কিন্তু পুলিস যুবককে গ্রেপ্তার করতেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। সব জানতে পেরে চক্ষু চড়কগাছ স্বামীর। যদিও পুলিস অভিযুক্ত প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করেছে বধূকেও। কিন্তু তিনি এখন লজ্জায় বাড়ি ফিরতে নারাজ।
বধূর স্বামী বলেন, রামদা দেখিয়ে ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে নিয়ে যায় যুবক। আমি ও মেয়ে দেখে বাধা দিতে গেলে মারতে উদ্যত হয়েছিল। বুঝতেই পারিনি ওদের মধ্যে আগে থেকে সম্পর্ক রয়েছে। এভাবে নাটক করে বাড়ি ছাড়ার কোনও দরকার ছিল না।
তপন থানার পুলিস জানিয়েছে, ধৃত যুবকের বাড়ি তপনের রাঙ্গামাটি গ্রামে। বধূর স্বামী ভিনরাজ্যে কাজ করতেন। সেই সুযোগেই বধূর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যুবকের। বধূর বাড়ির আশেপাশে ফাঁকা থাকায় সুযোগ বুঝে বাড়িতেই আসা যাওয়া করত ওই যুবক। স্বামী ভিনরাজ্যে কাজ করায় এতদিন চুটিয়ে প্রেম করছিল দু’জন। সম্প্রতি স্বামী বাড়িতে চলে আসায় ভাটা পড়েছিল প্রেমে। স্বামীকে লুকিয়ে কিছুতেই আর দেখা করতে পারছিল না বধূ। মেয়েকে রেখে পালিয়েও যেতে পারছিল না। অবশেষে অপহরণের নাটকের ছক কষে দু’জন। পরিকল্পনা মতো এদিন সকাল সকাল বধূর বাড়িতে রামদা নিয়ে হাজির হয় যুবক। অপহরণের সময় স্বামী ও মেয়ে চিৎকার করলেও বধূ চিৎকার করেনি। অভিযোগ পেয়ে তপন থানার পুলিস তদন্ত নেমে দু’জনকে উদ্ধার করে।
এবিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।