নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: এবার আর রাস্তা-ঘাটে নয়। একেবারে ঘরে ঢুকে দুষ্কৃতী হামলা। রবিবার মাঝরাতে নিজের বাড়িতেই দুষ্কৃতী হামলার শিকার এক বৃদ্ধা। শহর শিলিগুড়ি যে দুষ্কৃতীদের আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে, তা ফের প্রমাণিত হল রবিবার রাতের এই ঘটনায়। বৃদ্ধাকে খোয়াতে হল সোনার গয়না সহ লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী। সোমবার সকালে ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুলিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির দক্ষিণ শান্তিনগরে। অভিযোগ, রবিবার গভীর রাতে মুখ ঢেকে তিন দুষ্কৃতী একটি বাড়িতে ঢোকে। সেখানে ৭৩ বছরের শ্যামলী চক্রবর্তীর মুখে কাপড় গুঁজে বেধড়ক মারধর করে। তাঁর কানের সোনার দুল ছিঁড়ে নেয়। ঘরের অনেক মূল্যবান সামগ্রীও চুরি করে পালায় তিনজনের ওই দুষ্কৃতী দলটি।
রাতের ঘটনার পর আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই শ্যামলী দেবী। এদিনও তাঁর চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক। শারীরিক সমস্যার জন্য একাই বাড়ির নীচতলায় থাকেন তিনি। রাত প্রায় তিনটে নাগাদ বাড়ির পিছনের লোহার গেট খুলে ঘরে ঢোকে তিন দুষ্কৃতী। প্রত্যেকের মুখ ছিল কালো কাপড়ে ঢাকা। ঘরে ঢুকেই তারা বৃদ্ধার মুখ চেপে ধরে কাপড় গুঁজে দেয়। যাতে কোনওভাবেই চিত্কার করে তিনি লোক ডাকতে না পারেন। এরপরই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। কান থেকে ছিঁড়ে নেওয়া হয় সোনার দুল। বৃদ্ধার আরও দাবি, ঘরের আরও অনেক মূল্যবান সামগ্রী লুট করে পালায় ওই তিনজন। মারধরে গুরুতর জখম হন ওই বৃদ্ধা। কান থেকে ঝরতে থাকে রক্ত। ফুলে যায় মুখ-চোখ। দুষ্কৃতীরা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই বৃদ্ধার চিৎকার শুনে দোতলায় থাকা ছেলে ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। পরে খবর দেওয়া হয় নিউ জলপাইগুড়ি থানায়। এলাকার সিসি ক্যামেরা ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিং বলেন, লুটপাট ও মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় স্তম্ভিত বৃদ্ধার ছেলে সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, আমরা মায়ের চিত্কার শুনে নীচে এসে এই ঘটনা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কে বা কারা কেন এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, পুলিস তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলেই আশা করছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, কয়েক সপ্তাহে শহরে একাধিক চুরি, ডাকাতি ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। অথচ পুলিসের টহল কার্যত দেখা যাচ্ছে না। ঘরে ঢুকে দুষ্কৃতী হামলার পর মানুষ আরও আতঙ্কিত। পুলিসের বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন রয়েছে বলেও দাবি এলাকার বাসিন্দাদের। একদিকে যেমন এটিএম লুট, সোনার দোকানে ডাকাতি ঘটেছে। তেমনই কয়েকদিনের মধ্যে শিলিগুড়ি শহর সহ সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাই, চুরির ঘটনাও বেড়েছে। অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় পুলিসের টহলদারি জোরদার করার দাবি উঠেছে।