• গাঁজার পর ব্রাউন সুগার, হেরোইনের কারবারের নতুন ঠিকানা কোচবিহার
    বর্তমান | ০১ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: শুধু গাঁজা নয়, ব্রাউন সুগার ও হেরোইনের নতুন ঘাঁটি কোচবিহার। বর্তমানে এখানে আফিম চাষ থেকে ব্রাউন সুগার ও হেরোইন তৈরি এবং অন্যত্র পাচার হচ্ছে। লাগাতার মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিস। তাদের সন্দেহ, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক সিন্ডিকেট জড়িত। ইতিমধ্যে পুলিস হাজার হাজার বিঘা জমির আফিম ও গাঁজা ধ্বংস করেছে। 

    কোচবিহারের পুলিস সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, গাঁজা, ব্রাউন সুগার, হেরোইন সহ বিভিন্ন ধরনের মাদক কারবারের বিরুদ্ধে জেলার প্রতিটি থানার পুলিস সতর্ক রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। 

    নদীবেষ্টিত কোচবিহারে গাঁজা চাষের চল অনেক দিনের। জেলার কোচবিহার-১, দিনহাটা, সিতাই, মাথাভাঙা ও শীতলকুচি এলাকায় নদীর চরে গাঁজা চাষ করা হয়। সেখান থেকেই গাঁজা চোরাপথে শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের এবং দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় পাচার হয়। ইদানিং গাঁজার পাশাপাশি জেলায় নজর পড়েছে ব্রাউন সুগার ও হেরোইন কারবারিদের। মূলত কোচবিহার-২ ব্লক ব্রাউন সুগার ও হেরোইন কারবারিদের ঘাঁটি। তারা সেখানে তোর্সা নদীর চরে আফিস চাষ করছে। আফিম ফলের আঠার সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ব্রাউন সুগার ও হেরোইন। 

    স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রামবাসীদের সহজে মোটা টাকা কামানোর টোপ দিয়ে নদীর চরে আফিমের চাষ করাচ্ছে বহিরাগতরা। সেই গাছের আঠা থেকে তৈরি ব্রাউন সুগার, হেরোইন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এখান থেকে সেই সব মাদক চোরাপথে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের এবং দক্ষিণবঙ্গে বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করা হচ্ছে। 

    এবার মাদকের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযানে নেমেছে কোচবিহার জেলা পুলিস। ইতিমধ্যে তারা প্রচুর মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে। পাশাপাশি,  গাঁজা ও আফিম চাষের জমি ধ্বংস করছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় বছরে জেলায় গাঁজা ও আফিম খেত ধ্বংসের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার বিঘা, যা রেকর্ড। এরমধ্যে আফিম ও গাঁজা খেতের পরিমাণ, যথাক্রমে-৫ হাজার ৫৯২ বিঘা এবং ১০ হাজার ৯২৪ বিঘা ১৫ কাঠা। ২০২৪ সালে ৭৪৫ বিঘা আফিম খেত এবং ৮৮৫৮ বিঘা ৪ কাঠা গাঁজা খেত এবং ২০২৫ সালের এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮৪৬ বিঘা আফিম এবং ২ হাজার ৬৬ বিঘা ১১ কাঠা গাঁজা খেত ধ্বংস করা হয়েছে। 

    গোয়েন্দাদের সন্দেহ, আফিম চাষের মূল উদ্দেশ্য ব্রাউন সুগার ও হেরোইন প্রস্তুত। এরসঙ্গে মালদহ, মুর্শিদাবাদ সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা মাদক কারবারিরা জড়িত। যাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের যোগাযোগ রয়েছে। পুলিস সুপার বলেন, কখনও উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ড্রোনের মাধ্যমে আগাছা নাশক স্প্রে করে গাঁজা ও আফিম খেত নষ্ট করা হয়েছে। আবার কখনও নদীর চরে অভিযান চালিয়ে খেত নষ্ট করা হচ্ছে। এই অভিযান চলবে। একই সঙ্গে মাদক কারবারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। চলতি বছর এনডিপিএস আইনে ১২৮টি মামলা রুজু করা হয়েছে। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৯২ জনকে।
  • Link to this news (বর্তমান)