বিয়ে ও সন্তান গোপন করে ফের সংসার, প্রতিবাদী দ্বিতীয় স্ত্রীকে মারধর ও খুনের হুমকি তৃণমূল নেতার
বর্তমান | ০১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: নিজের বিয়ের কথা লুকিয়ে তরুণীকে বিয়ে। পরে সেই সম্পর্কের কথা জানাজানি হয়ে যায়। প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন ওই তরুণী। অর্থাৎ, দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী। সেই সঙ্গে স্বামীর দুর্নীতির প্রতিবাদও করেন। তা মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল নেতা। ওই তরুণীকে ব্যাপক মারধর ও খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। শাসক শিবিরে এই নেতার এহেন কীর্তি ফাঁস হয়ে যেতেই তোলপাড় শান্তিপুর। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে রানাঘাটের পুলিস। এসডিপিও (রানাঘাটা) সবিতা গটিয়াল সোমবার বলেছেন, ‘আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে একটি কেস রুজু করেছি। তদন্ত চলছে। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।’
জানা গিয়েছে, ওই নেতা শান্তিপুর ব্লক-এ’র তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। ইতিমধ্যেই ওই তরুণী শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু পুলিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্যাতিতা। তিনি নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন বলে দাবি ওই তরুণীর। পুলিস সূত্রে খবর, ওই নেতা সুব্রত সরকারের বিরুদ্ধে ভুরিভুরি অভিযোগ এনেছেন তাঁর নিগৃহীতা দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী অঙ্কিতা কুন্ডু। অভিযোগ, সুব্রতবাবু ২০২৪ সালের ২৩ মে নিজের বিবাহিত সম্পর্ক এবং সন্তানদের কথা গোপন করে বিয়ে করেন। পরে সেই সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেন অঙ্কিতা। শুধু তাই নয়, দলেরই এক মহিলা কর্মীর সঙ্গেও সুব্রতবাবুর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পারেন অঙ্কিতা। ফলে দূরত্ব বাড়ে দু’জনের। নিগৃহীতার দাবি, তিনি প্রতিবাদ করলে ওই নেতার রোষের মুখে পড়েন। এরপর থেকেই বিভিন্নভাবে ওই তৃণমূলের নেতা এবং তার পরিবার তাকে হুমকি দিতে থাকে। কখনও অ্যাসিড হামলার হুমকি দেন। কখনও সরাসরি খুনের হুমকি দিতে থাকেন। ওই তৃণমূল নেতার লাগামছাড়া দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে অত্যাচার এবং হুমকির মাত্রা বাড়ে বলে অভিযোগ। অঙ্কিতা এদিন বলেন, ‘এরই মধ্যে একবার আমাকে খুনের চেষ্টাও করা হয়েছে। তাও আমি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি আমাদের বিবাহিত জীবনের কিছু ছবি সুব্রত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়। আমি আতঙ্কে রয়েছি।’
যদিও অঙ্কিতার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে সুব্রত বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চলছে আমার বিরুদ্ধে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ।’ বিষয়টি নিয়ে শান্তিপুরের বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী বলেন,
‘সুব্রত আমাদের দলের ব্লক সভাপতি। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে প্রত্যেক মানুষের একটা ব্যক্তিগত জীবন থাকে। এটা ওঁর ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা। রাজনৈতিক ময়দানে সেটিকে টেনে আনার কোনও প্রয়োজন নেই। দল তো কারও ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। অভিযোগ যখন হয়েছে প্রশাসন প্রশাসনের মতো ব্যবস্থা নেবে।’ তবে, তৃণমূলের ওই নেতাকে তীব্র আক্রমণ করে শান্তিপুরের বিজেপি নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। কসবায় তৃণমূলের নেতাই ধর্ষণে যুক্ত। আর এখানে ওদের আর এক নেতা নারী নির্যাতনের কান্ডারি। রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও বাংলার নারীরা কীভাবে লাঞ্ছিত সেটা সারা দেশ দেখছে। এটা একজন বাঙালি হিসেবে আমাদের কাছে লজ্জার।’