• বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা! রুজিরুটি বাঁচানোর তাগিদে হিন্দি ‘পাঠশালা’য় পরিযায়ী শ্রমিকরা
    বর্তমান | ০১ জুলাই ২০২৫
  • সংবাদদাতা, করিমপুর: প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পরিযায়ী শ্রমিকদের ডেরায় কান পাতলেই শোনা যায়, পঠনপাঠনের আওয়াজ। অপরিচিত শব্দ ব্যবহার করে কেউ পড়ছেন, কথা বলছেন। বাইরে থেকে বোঝার জো নেই, ভিতরে আদৌ কি হচ্ছে। ডেরার মধ্যে ঢুকলেই নজরে পড়বে, সবাই গোল করে করে বসে রয়েছেন। তাঁদের হিন্দি ভাষা শেখাচ্ছেন এক ব্যক্তি। তাঁকে শিক্ষক বলে মানছেন সকলেই। শ্রমিক ছাত্রেরা বারবার ভুল উচ্চারণ করলে শুধরে দিচ্ছেন সেই শিক্ষক! একেবারে যেন ‘পাঠশালা’। 

    কথায় বলে, ‘ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে চড়ে না।’ পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা এখন অনেকটা সে সেরকমই। ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে ঠেলায় পড়ছেন। বাংলা বললেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারপর শুরু হচ্ছে হেনস্তা করা। রাখা হচ্ছে আটক করে। যা নিয়ে এখন সরগরম গোটা বাংলা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।  মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর সহ একাধিক জেলার বাংলাভাষী শ্রমিকরা এভাবে অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। পরিচয়পত্র দেখিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। পরিযায়ী শ্রমিকরা মনে করছেন, এই সমস্যা বাঁচার একমাত্র রাস্তা জড়তাহীন, স্পষ্ট হিন্দি ভাষায় কথা বলা। তাই কাজ সেরে ফিরেই হিন্দি শেখার পাঠশালায় যোগ দিচ্ছেন তাঁরা। হিন্দিভাষী ঠিকাদাররা ওই পাঠশালার শিক্ষক।

    ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র, ওড়িশা-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশি সন্দেহে শ্রমিকদের হেনস্তার ১০০টিরও বেশি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি বলেই দাবি শ্রমিকদের। অনেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়েও আতঙ্কে বাড়ি ফিরে এসেছেন। ফলে পেটের টানে মুর্শিদাবাদের বাংলাভাষী শ্রমিকরা এখন হিন্দি শিখতে মরিয়া।

    ভারতে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে দেশ জুড়ে। তার পর তাঁদের পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, ওড়িশা-সহ দেশের একাধিক রাজ্যে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চিহ্নিতকরণের কাজে কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী ভূমিকাও নিতেও দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে জাতীয় রাজনীতিও তোলপাড়। শুধুমাত্র ভাষার নিরিখে বাংলাদেশি তকমা দেওয়ার নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। সোমবার সেই প্রসঙ্গ টেনে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিজেপিকে দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে!

    মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করা প্রায় ৩০ জনকে শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশি বলে হেনস্তা করা হয়। উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে মুর্শিদাবাদের সাগরপাড়ার বেশ কিছু পরিচিত শ্রমিককে স্থানীয় লোকজন বাংলাদেশি দাবি করে মারধর করেন। মূলত বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণেই তাঁদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আহত অবস্থায় ওই শ্রমিকদের পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেয়। পরে ছেড়েও দেয় পুলিশ।
  • Link to this news (বর্তমান)