• চেইন মার্কেটিংকেও হার মানাবে লাভজিতের গেমিং প্রতারণা, ভাড়ায় নিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট
    বর্তমান | ০১ জুলাই ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল  বর্ধমান 

    সাধারণ গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই ‘গেমিং অ্যাপ’-এ প্রতারণার জাল বিছিয়েছিল দিল্লিতে ধৃত লাভজিৎ সিং। অ্যাকাউন্ট পিছু দেওয়া হতো এককালীন সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে, সরাসরি গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না চতুর লাভজিতের। এই কাজের জন্য সে নিয়োগ করেছিল এজেন্ট। তারাই ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে গ্রাহক সংগ্রহ অভিযানে নেমেছিল। আবার নিজেরাও অ্যাকাউন্ট খুলত। সেই সব অ্যাকাউন্টের জন্য এজেন্টরা পেত এক থেকে দেড় হাজার টাকার কমিশন। প্রতারণার পুরো প্রক্রিয়াটি দুবাইয়ে দস্তুরমতো অফিস খুলে অপারেট করত বর্ধমান থানার মির্জাপুরের যুবক। তার অন্যতম সহযোগী ছিল সুবেশা এক বিদেশিনী। সবমিলিয়ে গেমিং অ্যাপ-এর মাধ্যমে প্রতারণাকে ‘চেইন মার্কেটিং’-এর মতো সাজিয়েছিল লাভজিৎ। তদন্তে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে তাজ্জব গোয়েন্দারা!

    তদন্ত সূত্রে খবর, মূলত অভাবি ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের টার্গেট করত লাভজিতের এজেন্টরা। তাঁদের টাকার টোপ দেওয়া হতো। রাজি হলেই হাতে পেয়ে যেতেন কড়কড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে শর্ত একটাই— এটিএম কার্ড বা অনলাইন অ্যাক্সেস সবটাই এজেন্টদের হাতে থাকবে। অ্যাকাউন্টে কত টাকা লেনদেন হচ্ছে, তা গ্রাহকরা জানতে পারবেন না। সম্মতি পেয়ে গেলেই লাভজিত গেমিং প্রতারণার টাকা ওইসব অ্যাকাউন্টে পাঠাত। এজেন্টরা আবার সেই টাকা তুলে নির্দিষ্ট আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্টে জমা করত। 

    পরে সময় সুযোগ বুঝে লাভজিৎ ওই টাকা হাতিয়ে নিত। ভারতে জমাকৃত অর্থ হাতাতে এসেই জালে পড়ে যায় সে। দুবাই থেকে দিল্লি বিমানবন্দরে নামতেই দিল্লি পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে দিল্লি পুলিসের কাছ থেকে তাকে রিমান্ডে নেয় ভাতার থানার পুলিস। 

    প্রশ্ন হল, লাভজিতের গেমিং অ্যাপ প্রতারণার সঙ্গে ভাতারের যোগসূত্র কোথায়? পূর্ব বর্ধমানের মির্জাপুর লাভজিতের বাড়ি হওয়ার সুবাদে ভাতারের সঙ্গে তার যোগ ছিলই। প্রতারণার জাল বিস্তারে ভাতারে তার কয়েকজন পরিচিতকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেছিল সে। পুলিস তদন্তে জানতে পারে, এই থানা এলাকার তিনটি অ্যাকাউন্টে প্রতারণার কয়েক লক্ষ টাকা জমা পড়েছিল। যেগুলি ভাড়া হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন পর ওইসব অ্যাকাউন্টের গ্রাহকরা জানতে পারেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হচ্ছে। তাঁরা এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এজেন্টরা তাঁদের জানিয়েছিল, একবারই কয়েক হাজার টাকা আসবে। তারপরই এটিএম কার্ড দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু, এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হবে বলে তাঁরা ভাবেননি। বিষয়টি তাঁদের সন্দেহ হয়। যোগাযোগ করেন ভাতার থানায়। 

    গ্রাহকদের কাছ থেকে সব শুনে তদন্তে নামে ভাতারের পুলিস। খোঁজ মেলে  এজেন্টদের। তাদের জেরা করে লাভজিত সিংয়ের নাম জানতে পারেন তদন্তকারীরা। তখন সে দুবাইয়ে ছিল। কবে সে দেশে ফিরবে, সেই অপেক্ষা করতে থাকে পুলিস। তদন্তকারী এক অফিসার এদিন বলছিলেন, বিভিন্ন রাজ্যে লাভজিতের নামে থানায় অভিযোগ রয়েছে। কয়েক কোটি টাকা গেমিং অ্যাপসের মাধ্যমে সে হাতিয়েছে। এই কাজে তাকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিল বিদেশি বান্ধবী। তিনিও লাভজিতের সঙ্গে কয়েকবার এদেশে এসেছিলেন। তবে, তাঁর নামে এদেশের কোনও থানায় অভিযোগ হয়নি। 

    ‘দুনিয়া মুঠি মে’-এর যুগে মোবাইল গেমে আসক্ত যুব সমাজ। বেশ কিছু গেম আপলোড করতে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নথি জমা দিতে হয়। 

    টাকা দিয়েও কিছু গেম কিনতে হয়। লাভজিৎ ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত ওইসব তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পর অ্যাকাউন্টের টাকা তছরূপ করে দিত। এছাড়া, নিজেও একটি গেমিং অ্যাপ তৈরি করেছিল। সেই অ্যাপ যাঁরাই ডাউনলোড করেছিলেন তাঁদের অনেকের অ্যাকাউন্ট সাফ হয়ে গিয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)