• চিকিৎসাধীন দগ্ধ বধূর অবস্থার অবনতি, বাংলোয় অগ্নিকাণ্ডে ধোঁয়ায় শ্বাসরোধে মৃত্যু ৩ জনের
    বর্তমান | ০১ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: আসানসোলের ফতেপুরে বাংলোয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগেই মারা গিয়েছেন তিনজন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বাড়ির একমাত্র জীবিত সদস্যা শিল্পী চট্টোপাধ্যায়। মৃতরা সম্পর্কে শিল্পীর স্বামী ও বাবা-মা। সোমবার হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসকরা সবরকম চেষ্টা করছেন। খবরটি চাউর হতেই উদ্বিগ্ন শিল্পীর পরিবার ও পড়শিরা। এদিকে, তিনজনের মৃত্যু হয়েছে ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে।  ময়নাতদন্ত হওয়ার পর পুলিসের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। তা থেকেই জানা গিয়েছে, বাংলোর প্রতিটি ঘরে সম্ভবত শীতাতপ যন্ত্র চালু ছিল। বন্ধ ছিল দরজা-জানলা। আগুন লাগার পর ধোঁয়ার বেরনোর পথ ছিল। তাই শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান তিনজনই। তারপরই তাঁদের দেহ আগুনে দগ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, ঘটনার প্রায় ৪৮ ঘণ্টার পরও আগুন লাগার কারণ নিয়ে অন্ধকারে পুলিস। 

    শনিবার রাতে ফতেপুরের ‘স্বাগতম রেসিডেন্সি’র ওই বাংলোয় আগুন লাগে। বাংলোটি ব্যবসায়ী বাবলু সিংয়ের। দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে থাকতেন তিনি। ঘটনার দিন বাবুল ও তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি মারা যান। কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন শিল্পী। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরপরই বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিস। ট্রমায় থেকেও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা পুলিসকে জানিয়েছেন তিনি। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হতেই তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি বাথরুমে গিয়ে চোখে জল দিয়ে বাকিদের তোলার চেষ্টা করেন। তাঁদের তুলতে না পেরেই তিনি আর্তনাদ শুরু করে দেন। এদিন ওই সোসাইটির সম্পাদক উত্তম দাসও বলেন, ‘আমরাও শিল্পীকে উদ্ধারের সময় জানতে চেয়েছিলাম, বাকিরা কোথায়? উনি জানিয়েছিলেন, তাঁদের তুলতে পারেননি।’ 

    এখন পুলিসি তদন্ত যেখানে আটকে রয়েছে তা হল আগুন লাগলো কী ভাবে? ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরও পুলিস তা নিশ্চিত করতে পারেনি। সোমবারই ফরেন্সিক টিমের আসার কথা ছিল। এদিন তাঁরা আসেনি। জানা গিয়েছে, সম্ভবত মঙ্গলবারই আসছে টিম। তারপরই স্পষ্ট হবে কী ভাবে অগ্নিকাণ্ডটি ঘটেছে।পুলিস সূত্রে খবর, বাবলুর বাড়ি ঝাড়খণ্ডের নিরসা এলাকায়। ঝাড়খণ্ডের নিরসাতে যথেষ্ট প্রভাবশালী এই বাবলু। কয়লা কারবারিদের পরিবার। তাঁরা বাবা মাক্ষু সিং বড় কয়লা কারবারি ছিলেন। তারপরই সেই কারবার দেখভাল করছিলেন বাবলু। সেখানে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে রয়েছেন। রবিবারই আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে তাঁর ছেলে গুরদীপ সিং ময়নাতদন্তের পর বাবার দেহ নিয়ে গিয়েছে নিরসায়। সেখানেই শেষকৃত্য হয়। এদিন বাবলুর আত্মীয়রা হঠাৎই হাজির হয় ফতেপুরে। এসেই প্রতিবেশীদের একপ্রকার জেরা শুরু করেন। কী করে ঘটনা ঘটেছিল, কী ভাবেই বা শিল্পী চট্টোপাধ্যায় বেঁচে থাকলেন? স্থানীয়রা কীভাবে তালা ভেঙে শিল্পী চট্টোপাধ্যায়কে উদ্ধার করেছে? পুলিসে কোনও অভিযোগ না করেই দু’টি গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে এসে বাবলুর পরিবারের এই ‘স্বতঃপ্রণোদিত’ তদন্তে খটকা লাগছে তদন্তকারীদের। সোসাইটির সম্পাদক উত্তম দাস বলেন, ‘বাবলুবাবুর আত্মীয়রা যা যা প্রশ্ন করেছিলেন, যতটুকু জানি উত্তর দিয়েছি।’ 

     ফতেপুরের সেই বাংলো।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)