শৌচাগারে মৃত সন্তান প্রসব, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ
বর্তমান | ০১ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ফের চূড়ান্ত অব্যবস্থা, চিকিৎসায় গাফিলতি ও রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠল। তিনদিন আগে নানুরের পালিটা গ্রামের শামসুন্নাহার বিবি নামের এক গর্ভবতী মহিলা ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। পাঁচ মাসের গর্ভাবস্থায় আচমকা তাঁর রক্তক্ষরণ হওয়ায় রবিবার রাতে তাঁর গর্ভপাত করেন মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসকরা। এরপর, তাঁকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলে ঘোষণা করে সোমবার সকালে ছুটি দেওয়া হবে বলেও জানানো হয বলে রোগী পরিবারের দাবি। কিন্তু সোমবার সকালে আচমকাই হাসপাতালের শৌচালয়ে গিয়ে মৃত সন্তান প্রসব করেন ওই প্রসূতি। রোগীর পরিবারের প্রশ্ন, কীভাবে গর্ভপাত করা হল? কীভাবেই বা ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? তাঁদের অভিযোগ, চিকিৎসক এবং নার্সরা রোগীকে অবহেলা করেছেন। এই ঘটনায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সোমবার সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখায় রোগীর পরিবার। হাসপাতাল চত্বরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র ক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে শান্তিনিকেতন থানার ওসি-সহ বিশাল পুলিস বাহিনী আসে। ওই মহিলার স্বামী শফিউল্লাহ শেখ ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন থানায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন।
রোগীর পরিবারের দাবি, সরকারি হাসপাতালে রোগীদের প্রতি ন্যূনতম যত্ন ও মানবিকতা নেই। অভিযোগ, চিকিৎসক-নার্সদের একাংশের ঔদ্ধত্য ও দায়িত্বহীনতা বারবার রোগীর প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা করছে। এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগে, ফেব্রুয়ারি মাসে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা গাফিলতি এবং নার্সের দুর্ব্যবহারে মৃত্যু হয়েছিল ফেন্সি ঘোষ নামে এক প্রসূতির। সেবারও অভিযোগ ছিল, প্রসবের পরে সেলাই করার সময়ে যন্ত্রণায় ফেন্সি হাত-পা ছুঁড়তে থাকায় তাঁর পা গিয়ে এক নার্সের গায়ে লাগে। এরপরই রোষানলে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান ফেন্সি। এই ঘটনায় প্রবল হইচই হয়েছিল। তারপর থেকে গত চার মাসে হাসপাতালে গর্ভপাত, শিশু মৃত্যু ও প্রসূতি মৃত্যুর মতো ঘটনা চারবার ঘটেছে। তবে, কোনও ঘটনাতেই অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
হাসপাতালের রোগী পরিবারগুলির অভিযোগ, প্রতিমাসে রোগী কল্যাণ কমিটির বৈঠক হয়। পদাধিকার বলে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, বোলপুরের মহকুমা শাসক অয়ন নাথ-সহ হাসপাতালের শীর্ষকর্তারা। কিন্তু বৈঠকই সার। এ যাবৎ হওয়া নথিভুক্ত অভিযোগের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর সেই কারণে একই ধরনের চিকিৎসা গাফিলতি ও অবহেলা বারবার ঘটে চলেছে। তাই বৈঠকের ভূমিকা ও কার্যকারিতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সোমবারের ঘটনায় ফের প্রমাণিত হলো, সাধারণ মানুষের ভরসার এই সরকারি হাসপাতাল আজও রোগীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। রোগীর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একটাই দাবি—এই চরম অবহেলা ও অসংবেদনশীল আচরণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এমনটাই চাইছেন শামসুন্নাহারের স্বামী ও পরিবার। শফিউল্লাহ শেখ বলেন, গর্ভপাতের পর যন্ত্রণায় কাতর হওয়ায় আমরা বারবার আল্ট্রাসনোগ্রাফির করার কথা বলেছিলাম। ডাক্তার গ্রাহ্য করেননি। আমার স্ত্রীর কিছু হয়ে গেলে তার দায় কে নিতো? ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হাসপাতাল সুপারকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি, পাশাপাশি, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেব। যাতে আগামী দিনে কোনও রোগীদের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।