• ব্ল্যাকমেলের হাতিয়ার ভিডিও, ছাত্রীদের বারবার ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করত মনোজিৎ
    বর্তমান | ০১ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘দাদা’র ইচ্ছেতেই কর্ম। তার নির্দেশেই ফর্ম ফিল আপের সময় ‘তরুণী বাছাই’, প্রথমে ইউনিয়ন রুম এবং তারপর গার্ড রুমে ডেকে আনা, ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করা, আর মোবাইল ফোনে তুলে রাখা সেই ভিডিও। এটাই ছিল গোটা ঘটনাক্রম। প্রতি বছরের। প্রতি দিনের। পুলিসের জেরায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্যই ফাঁস করেছে কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের দুই শাগরেদ প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জায়িব আহমেদ। সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি বদলে গিয়েছিল ত্রাসে। প্রথমে ছাত্রীদের ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করত মনোজিৎ। তারপর তাঁদের ‘কম্প্রোমাইজ’ করার ভিডিও দেখিয়ে চলত ব্ল্যাকমেল। প্রত্যেকবারই মনোজিতের ‘লীলাক্ষেত্র’ ছিল ওই গার্ড রুম। 

    তদন্ত যত এগচ্ছে, ততই বেআব্রু হয়ে পড়ছে মনোজিতের লালসার সাতকাহন। তার সব কুকীর্তির সঙ্গী জায়িব ও প্রমিতই জেরায় ফাঁস করে চলেছে সেই তথ্য। তারা জানিয়েছে, মনোজিতের কথা মতোই ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের ভিডিও করা হতো। বহু তরুণীকে তার লালসার শিকার হতে হয়েছে। বারবার। বাধা দিলে ধর্ষণের চেষ্টা। কারণ, মনোজিৎ বাহিনীর হাতে ছিল মারণাস্ত্র—ওই তরুণীদের ভিডিও। জোর করে ছাত্রীদের গার্ড রুমে নিয়ে যাওয়ার কাজটা ছিল প্রমিত ও জায়িবের। ভিডিও করত কোনও একজন। মূলত গার্ড রুমের জানালা দিয়ে। এখানেই শেষ নয়। কলেজ ছাত্রীদের নিয়ে বছরে দু’বার ট্যুর বা পিকনিকে যেত ‘দাদা’। ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করানো হতো ফিরতে। চলত দেদার মদ্যপান। তারপর ছাত্রীদের বাধ্য করা হতো ঘনিষ্ঠ হতে। কোন তরুণীকে মনোজিৎ তার শিকার বানাতে চাইছে, তা ইশারায় বুঝিয়ে দিত অভিযুক্ত দুই শাগরেদকে। তারাই নিয়ে আসত ওই ছাত্রীকে। বসাত ‘দাদা’র পাশে। যাওয়ার সময় পাশে একজন। ফেরার সময় অন্য। এমনই ছিল তার লীলাখেলা। জায়িব ও প্রমিত জানিয়েছে, ‘দাদা’র ট্যুরে তার এক ঘনিষ্ঠ নেতাও মাঝেমধ্যে যেতেন। তবে তিনি কে, গোটা ঘটনাক্রমের সঙ্গে তাঁর যোগ কতটা ছিল, সেই বিষয়ে পুলিস বিস্তারিত কিছু জানায়নি। প্রমিত ও জায়িব জানিয়েছে, ট্যুরে আকণ্ঠ মদ্যপান করিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে মনোজিৎ যা করত, তার পুরোটাই ভিডিও করে নিত জায়িব ও প্রমিত। ফেরার পর সেই ভিডিও ব্যবহার হতো ব্ল্যাকমেলে। বলা হতো, ‘দাদা ডাকছে। না গেলে এই সব ছবি-ভিডিও বাবা-মাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারপর বন্ধুদের।’ তার উপর রাজনৈতিক প্রভাবের আতঙ্ক, ফেল করিয়ে দেওয়া কিংবা কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকি তো ছিলই। ভয় পেয়ে অনেকে বাধ্য হতো ফের ঘনিষ্ঠ হতে। কেউ কেউ আতঙ্কে কলেজ ছেড়ে দিত। কিন্তু অভিযোগ করার সাহস কেউ কখনও দেখায়নি। ব্যতিক্রম হল এবারই। আর এই এক অভিযোগই ধস নামিয়ে দিল মনোজিতের ত্রাসের সাম্রাজ্যে।

    জায়িব ও প্রমিতের দাবি, প্রতিদিন চলত মনোজিতের পার্টি। বিভিন্ন ফ্ল্যাটে, বা গার্ড রুমে। মদের ফোয়ারা ছুটত সেখানে। ‘দাদার কাজে’ হেল্প করে তারাও মাঝেমধ্যে তরুণীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। শ্লীলতাহানি দাদার কাছে ছিল ‘নরমাল’ ব্যাপার। গার্ড রুমে কিছু করলে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে মনোজিৎ নির্দেশ দিত, ‘ঘর সাফ করে দে।’ অকুস্থলে প্রমাণ রাখা যায় না... আইনজীবী ‘দাদা’ এটুকু জানত।
  • Link to this news (বর্তমান)