প্রমাণ মুছতে গার্ডকে অকুস্থল পরিষ্কারের নির্দেশ দেয় মনোজিত্, ‘কাউকে বললে খুন করে দেব’
বর্তমান | ০১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘সব ম্যানেজ হয়ে যাবে। চিন্তার কোনও কারণ নেই। কলেজ আমার দখলে। কাল সকালে যাব। সিসি ক্যামেরাগুলো নষ্ট করে দিতে হবে। যাতে কোনও ফুটেজ না থাকে’— ঘটনার দিন রাতেই জাইব ও প্রমিতকে কনফারেন্স কল করে মনোজিৎ। ফোনে এমনটাই জানায় সে। জেরায় চাঞ্চল্যকর সেই ফোনালাপের কথা স্বীকার করেছে জাইব ও প্রমিত। ধৃত দুই যুবক স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমকে (সিট) জানিয়েছে, গণধর্ষণের প্রমাণ নষ্টের ছক ছিল মনোজিতের। বৃহস্পতিবার দুপুরে আলিপুর আদালত থেকে ফিরেই প্লেস অব অকারেন্স বা পিও ‘ফিক্স-আপ’ করার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু, তার আগেই নির্যাতিতা ছাত্রী কসবা থানার দ্বারস্থ হন। গণধর্ষণের লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। সেই খবর পৌঁছে যায়, প্রভাবশালী ‘দাদা’ মনোজিতের কানে। তাই পরিকল্পনামাফিক ইউনিয়ন রুমের বাইরের সিসি ক্যামেরাগুলিকে নষ্ট করার সময় পায়নি কসবাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত।
শুক্রবার কসবা থানায় জাইব আহমেদ, প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলাদা আলাদাভাবে জেরা করে সিট। তাতে জাইব ও প্রমিতের বয়ানের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীর স্বীকারোক্তি মিল পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। পুলিস সূত্র জানিয়েছে, ধর্ষণের পর পিনাকীকে গার্ডরুম ভালো করে সাফ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় মনোজিৎ মিশ্র। জেরায় নিরাপত্তারক্ষীর দাবি, রাত প্রায় ১১টা নাগাদ মেয়েটি গার্ডরুম থেকে বেরিয়ে যায়। একইসঙ্গে মনোজিৎও বের হয়। এরপরেই মেয়েটি কলেজের ইউনিয়নরুমে যায়। কলেজ ছাড়ার পর মনোজিৎ পিনাকীকে রীতিমত ধমকায়। ধৃতের দাবি, ঘরটা লণ্ডভণ্ড হয়ে ছিল। চাদর বদলে গোটা ঘরটা পরিষ্কার করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় মনোজিৎ। তারপর সেখানে শুয়ে পড়ার পরামর্শ দেয় সে। সেই মতো ঘরে ঢোকে নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু, পরিষ্কার করেনি সে। কয়েকমিনিটের মধ্যেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ঘরের বাইরেই রাত কাটায় নিরাপত্তারক্ষী। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তার প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি পুলিসের। অপরদিকে, নির্যাতিতার বাবা ও মা এদিনই আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন।
জেরায় বেশ কিছু বিস্ফোরক দাবি করেছেন ধৃত নিরাপত্তারক্ষী। তিনি পুলিসকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সাড়ে সাতটা নাগাদ আচমকাই হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভিতর ঢোকে মনোজিৎ। কড়া স্বরে ঘর ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় অভিযুক্ত। আগেও মাঝেমধ্যেই আমার ঘর ব্যবহার করত। চলত মদ্যপান। কিন্তু, এদিন মুডটা অন্যরকম মনে হচ্ছিল। নিরাপত্তারক্ষীর পাল্টা প্রশ্ন শুনে সঙ্গে সঙ্গে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় ‘এমএম’। একইসঙ্গে মনোজিৎ কেড়ে নেয় নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইল ফোন। যাতে সে কাউকে ফোন করতে না পারে। কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় পিনাকীকে হুমকি দেয় মূল অভিযুক্ত। জেরায় নিরাপত্তারক্ষীর দাবি, ‘ঘরের ভিতর যে আওয়াজ পেয়েছ, তা কাউকে বললে খুন করে দেব। আমি কাল আবার আসব, তোমার খবর নিয়ে নেব।’