• ক্ষীর আর রাবড়ি দিয়ে বলরাম, সুভদ্রার মান ভাঙান জগন্নাথদেব
    এই সময় | ০১ জুলাই ২০২৫
  • পুলক বেরা, তমলুক

    দিন যত এগোচ্ছে, মাসির বাড়িতে থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে জগন্নাথদেবের। এ দিকে, অভিমান বাড়ছে বলরাম ও সুভদ্রার। কেন? তাঁরা যে কোনও দিনই রথে চড়তে পারেন না।

    জগন্নাথদেব ও গোপালজিউ রথে চড়ে পাড়ি দেন মাসির বাড়ি। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি। মহিষাদল রাজবাড়ির রথযাত্রার এটাই নিয়ম। গোপালজিউ আর জগন্নাথদেব যখন মাসির বাড়িতে খাতির–যত্নে থাকেন, ঠিক সেই সময়ে অভিমানী হয়ে ওঠেন বলরাম আর সুভদ্রা।

    মহিষাদলে ভাইবোনের এই মান-অভিমানের পালা চলে উল্টোরথ পর্যন্ত। জনশ্রুতি, রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের স্ত্রী জানকীদেবীর ইচ্ছেতেই শুরু হয়েছিল মহিষাদলের এই রথযাত্রা। তখন রথের ১৭টি চূড়া ছিল।

    এখন কমতে কমতে তেরোতে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার আভিজাত্য আর জনপ্রিয়তায় কিন্তু কোনও অংশে কমেনি। এখনও মহিষাদলের রথযাত্রা ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। দূরদূরান্ত থেকে ভিড় করেন বহু মানুষ।

    এখানে জগন্নাথদেবের সঙ্গে রথে চড়ে মাসির বাড়ি যান গোপালজিউ। মহিষাদলের ঘাগরা গ্রামে মাসির বাড়িতে থাকেন তাঁরা। বলরাম আর সুভদ্রাকে তাঁরা সঙ্গে নেন না। এই সাত দিন মাসির বাড়িতে গোপালজিউকে দেখা যায় বিভিন্ন বেশে।

    কখনও রাজবেশ, কখনও মৎস্য অবতার, কখনও বামন আবার কখনও নৃসিংহ ও কূর্ম অবতার। আবার রাখাল রাজা ও নটবর বেশেও ভক্তদের দর্শন দেন তিনি। এখানে রয়েছে সুভদ্রার অভিমান ও রাগ ভাঙানোর রীতি।

    রথযাত্রার তৃতীয় দিনে প্রতীকী ভাবে সুভদ্রা ও বলরামের ‘রাগ’ ও ‘অভিমান’ প্রকাশ পায়। সেই রাগ বা অভিমান দেখাতে মাসির বাড়িতে পাঠানো হয় কাঁঠালের বীজ, মিষ্টি কুমড়োর খোসা, শাকের শেকড়, আনাজের খোসার মতো নানা উপকরণ।

    বাজনা বাজিয়ে ওই উপকরণ পৌঁছে দেওয়া হয়। সে সব উপকরণ দিয়েই ভোগ নিবেদন করা হয় গোপালজিউ ও জগন্নাথকে।

    পরের দিন, অর্থাৎ চতুর্থ দিনে বলরাম-সুভদ্রার মান ভাঙাতে মাসির বাড়ি থেকে পাঠানো হয় গোটা ফল, ক্ষীর, রাবড়ি, ফ্রাইড রাইস-সহ নানা সুস্বাদু পদ। সেটিও বাজনা বাজিয়ে রাজবাড়ির মন্দিরে এনে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। এই মান-অভিমানের রীতি দেখতে ভিড় করেন ভক্তরা।

    রথকে কেন্দ্র করে মহিষাদলে একমাস ধরে চলে মেলা। থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৩৬ চাকা বিশিষ্ট মহিষাদলের ঐতিহাসিক রথটির এ বছর ছ’টি চাকা বদলানো হয়েছে।

    মহিষাদল রাজ পরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, ‘প্রাচীন রীতিনীতি মেনে আজও আমাদের সমস্ত আচারবিধি পালন করা হয়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন ভগবানের এই বেশ দেখতে ভিড় জমান।’

    স্থানীয় বাসিন্দা অর্ণব রায়ের কথায়, ‘প্রায় ৫৫ ফুট উচ্চতার স্পোকহীন ৩৬ চাকার রথ দেখতে যেমন সবাই ভিড় জমান, তেমনই রথের নানা রীতি দেখতে ভক্তরাও ভিড় করেন।’

  • Link to this news (এই সময়)