• মনোজিতের চাকরি খারিজ, প্রমিত-জ়ইবকে রাস্টিকেট
    এই সময় | ০১ জুলাই ২০২৫
  • এই সময়: ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার গণধর্ষণের পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ‘গড়িমসি’ করার অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ কলকাতার ওই আইন কলেজের বিরুদ্ধে। তবে এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করল উচ্চশিক্ষা দপ্তর।

    গণধর্ষণে মূল অভিযুক্ত ওই কলেজের অস্থায়ী কর্মী মনোজিৎ মিশ্রকে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। পাশাপাশি, সোমবার গণধর্ষণে অন্যতম অভিযুক্ত আরও দুই পড়ুয়া প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জ়ইব আহমেদকে কলেজ থেকে এখনই রাস্টিকেট করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

    উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, আজ, মঙ্গলবারই পরিচালন সমিতির (জিবি) বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই ল কলেজ কর্তৃপক্ষকে। সোমবার দুপুরেই কলেজ পরিচালন সমিতির তরফে ওয়েবসাইটে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে, কলেজের সব ক্লাস আপাতত সাসপেন্ড করা হচ্ছে।

    ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের আসতেও নিষেধ করা হয়েছে। যদিও মঙ্গলবার ও বুধবার বিএ এলএলবি–র প্রথম সেমেস্টারের পড়ুয়াদের পরীক্ষায় ফর্ম–ফিলাপ ও টাকা জমা দেওয়ার কথা। ১৬ জুলাই থেকে পরীক্ষা।

    শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং পড়ুয়াদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ হওয়ায় পড়ুয়াদের সঙ্কট তৈরি হলো। যদিও এ ব্যাপারে জানতে কলেজের উপাধ্যক্ষকে ফোন ও হোয়াট্যাসঅ্যাপ করা হলে তিনি উত্তর দেননি।

    একই সঙ্গে মনোজিতের আইনজীবীর তকমা কেড়ে নেওয়ার তৎপরতাও শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছে বার কাউন্সিল। ওই আইন কলেজের পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান রাজ্য বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব।

    এদিন বার কাউন্সিলের সদস্যরা অশোকের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তার পর কাল, বুধবার জরুরি বৈঠক ডাকার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বার কাউন্সিলের এক সদস্য জানান, বুধবার ওই বৈঠক করে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সব সদস্যের কাছে উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি পাঠানো হচ্ছে।

    উচ্চশিক্ষা দপ্তর গণধর্ষণে অভিযুক্ত তিনজনের শাস্তির পাশাপাশি কলেজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি এজেন্সিকেও শো-কজ় করার নির্দেশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি বিকেল চারটেয় কলেজ ছুটি হওয়ার পরে কেন প্রতিদিনই রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাস খোলা রাখা হয়, তা-ও বিশদে জানতে চাওয়া হয়েছে।

    বিকাশ ভবনের নির্দেশ, কলেজ চলাকালীন বহিরাগতরা যাতে ক্যাম্পাসে না ঢোকে, তা নিশ্চিত করতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। এখানেই শেষ নয়, দ্রুত ইন্টারনাল কমপ্লেনটস বা বিশাখা কমিটির (আইসিসি) বৈঠক ডেকে ২৫ জুনের গণধর্ষণে জড়িত প্রত্যেক অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে বিকাশ ভবন। একই সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসে সিসিটিভি-র সংখ্যা আরও বাড়ানো এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসিটিভি বসানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    ক্যাম্পাসে গণধর্ষণের বিষয়টি জানাজানির পরেই কলেজের উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় জানান, ঘটনাটি জানতে পেরেই তিনি জিবি–র সভাপতি অশোক দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সভাপতিই তাঁকে জানান, সোমবার কলেজ খুললে, পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকতে।

    যদিও সেই বৈঠক নিয়ে এ দিন ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। কলেজ পরিচালন সমিতিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি তথা শিক্ষানুরাগী শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাকে কিন্তু কেউ জিবি বৈঠকের কথাই জানায়নি।

    তা ছাড়া এখন কেন জিবি-র নামে কলেজ বন্ধ কর‍া হলো, তা–ও জানি না। এতে তো পড়ুয়াদের মধ্যে ভীতি আরও বাড়বে।’ জিবির আর এক সদস্য এসএস চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি হাসপাতালে আছি।’

    কলেজের সামনে বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়ারা এ দিন দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান। বিজেপির একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দলও কলেজে এসেছিলেন।

  • Link to this news (এই সময়)