• কুণালকে অশালীন আক্রমণ মীনাক্ষীর, মন্তব্য এড়িয়ে দ্বিধাবিভক্ত আলিমুদ্দিন
    প্রতিদিন | ০১ জুলাই ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে অশালীন শব্দে আক্রমণ করায় সিপিএম যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা করল বামফ্রন্ট। সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের মতো বামদলগুলি মীনাক্ষীর এই ধরনের অশালীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে। শুধু তাই নয়, কুণাল ঘোষের উদ্দেশে এ ধরনের শব্দ প্রয়োগের জন্য সিপিএম নেত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেই মনে করছে সিপিআই। আর ফরওয়ার্ড ব্লকের দাবি, কোনও বামনেত্রীর মুখের এই ধরনের ভাষা ক্ষমারও অযোগ্য। সিপিএম অবশ্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদ্য আসা আসানসোলের নেত্রীর এহেন মন্তব্য নিয়ে নিশ্চুপ। তবে মীনাক্ষীর এহেন শব্দ প্রয়োগ নিয়ে বামফ্রন্টের মধ্যেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে আলিমুদ্দিন, তা স্পষ্ট।

    কালীগঞ্জের প্রতিবাদ সভা থেকে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের উদ্দেশে বলা সিপিএমের মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের সেই কুকথার ভিডিও রবিবার ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজ্যজুড়ে। প্রবল সমালোচনা শুরু হওয়ায় মীনাক্ষীর এই ভাষাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করার সাহসও দেখাতে পারছেন না সিপিএম নেতারা। এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য না করে মীনাক্ষীকে ক্লিনচিট যে দিচ্ছেন না, তা কার্যত স্পষ্ট বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসুর মন্তব্যে। বিমান বসুর বক্তব্য, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এ বিষয়ে না জেনে কোনও মন্তব্য করবেন না। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও কার্যত সমর্থন না করে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আমি ছিলাম না, বলতে পারব না। সেলিমদাকে জিজ্ঞেস করুন।”

    সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলে তিনি মীনাক্ষীর এই শব্দপ্রয়োগ সমর্থন নিয়ে কোনও কথা না বলে কিছু মন্তব্য করতে চাননি। অর্থাৎ, রাজনৈতিক মহলের মতে, বিমান বসু, সুজন বা সেলিমরা এই ধরণের শব্দপ্রয়োগ নিয়ে মীনাক্ষীকে ক্লিনচিট না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় স্পষ্ট, সিপিএম যুবনেত্রীর এই কুকথাকে তাঁরা সমর্থন করছেন না। আবার সূত্রেরও খবর, পার্টির সদ্য কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়া মীনাক্ষীর এই ভাষা প্রয়োগ নিয়ে কার্যত দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সিপিএম। দলের কট্টরপন্থীদের প্রশ্ন, পার্টির শীর্ষপদে গিয়ে কি অহংবোধ গ্রাস করেছে মীনাক্ষীকে? দ্রুত গতিতে পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়ে যাওয়ায় কি মাথা ঘুরে গিয়েছে সিপিএমের যুবনেত্রীর? তাই কি ‘আত্মনিয়ন্ত্রণ’ হারাচ্ছেন?

    মীনাক্ষীর এই কুকথা নিয়ে তীব্র নিন্দা করে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে শিষ্টাচার যেন নষ্ট হয়ে না যায়। বাম নেতৃত্ব যদি এ ধরনের ভাষা প্রয়োগ করেন সেটা নিন্দনীয় ও অপরাধ বলেই মনে করছি। যা ক্ষমারও অযোগ্য।” সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া মন্তব্য, “বামপন্থীদের মুখ থেকে এ ধরনের ভাষা প্রয়োগ অনুচিত। মার্জনা চাওয়া উচিত।” সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের পলিটব্যুরোর সদস্য কার্তিক পালও তীব্র নিন্দা করেছেন মীনাক্ষীর এ ধরনের ভাষা প্রয়োগের। কার্তিক পালের কথায়, “মীনাক্ষী অনেক সময় ক্ষমতার বাইরে গিয়েও কথা বলে। বাম শৈলীটাও নেই। এ ধরনের শব্দপ্রয়োগ শোভনীয় নয়।”

    তবে সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অবশ্য প্রকাশ্যেই সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মীদের শব্দচয়নে সংযমী হওয়া প্রয়োজন। সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের কথায়, বাম আমলে বিনয় কোঙার থেকে অনিল বসুদের গলায় একসময় লাগাতার কুকথা শোনা যেত, যা ভালভাবে নেয়নি আমজনতা। তার ফল ভুগতে হয়েছিল সিপিএমকে। কাজেই মীনাক্ষীর এ ধরনের শব্দপ্রয়োগ পার্টির পক্ষে ক্ষতিকারক।
  • Link to this news (প্রতিদিন)