অভিযোগকারিণীর বয়ানের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ। তরুণীকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য যেমন ধরা পড়েছে দক্ষিণ কলকাতা ল’ কলেজে লাগানো সিসি ক্যামেরায়, তেমনই মিলেছে ‘প্যানিক অ্যাটাকের’ পরে অন্যতম অভিযুক্তের ইনহেলার কিনে এনে দেওয়ার ব্যাপারে তরুণীর দাবিও। কলেজের কাছের ওই ওষুধের দোকান থেকে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মিলে গিয়েছে, তরুণীর বয়ানের সঙ্গে ধৃতদের মধ্যে এক জনের মোবাইলে তুলে রাখা নির্যাতনের ভিডিয়োও। এই ঘটনায় পুলিশের তৈরি করা ন’জনের বিশেষ তদন্তকারী দলের এক সদস্যের দাবি, এ দিনই হওয়া তরুণীর দ্বিতীয় শারীরিক পরীক্ষা যৌন নির্যাতনের দিকেই ইঙ্গিত করেছে। মিলেছে যৌনাঙ্গে ক্ষত।
পুলিশ সূত্রে খবর, কলেজে ঘটনাস্থলের আশপাশে তিনটি সিসি ক্যামেরা সক্রিয় ছিল। তবে তার কোনওটিই যেখানে তরুণীকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই অভিমুখে নেই। যদিও পুলিশ ওই সমস্ত ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ১৭ জনকে চিহ্নিত করেছে। ঘটনার দিন বিকেলের পর থেকে তাঁদের কলেজে দেখা গিয়েছে। তবে সন্ধ্যার পরে তাঁদের মধ্যে অনেকেই বেরিয়ে যান। ধৃত এম, জে, পি এবং তরুণী ছাড়াও ছিলেন আরও চার জন। তবে এই চার জন বেরিয়ে যান আরও কিছু ক্ষণ পরে। পুলিশ জানতে চায়, তাঁদের কি কেউ কলেজে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে বলেছিল? তাঁরা চলে গেলেন যখন, কেউ কি চলে যেতে বলেছিল? পুলিশ ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা ১৭ জনের মধ্যে দু’জনের সঙ্গে ইতিমধ্যেইকথা বলেছে।
তরুণী তাঁর অভিযোগপত্রে নির্যাতনের সময় ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হওয়া এবং ধৃত জে ইনহেলার কিনে এনে দিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন। যে ওষুধের দোকান থেকে ইনহেলারটি কেনা হয়েছিল, সেটি চিহ্নিত করে পুলিশ দেখেছে, ওই দিন সন্ধ্যা ৮টা ২৯ মিনিটে সেখানে অনলাইনে সাড়ে তিনশো টাকা দাম মিটিয়ে ইনহেলার কেনে জে। রোগী হিসেবে সে নিজের নামই বলেছিল। জানা যাচ্ছে, ঘটনার রাতে কলেজের কাছে একটি ফুটপাতের ধারের স্টলে নুডলসের বরাত দেওয়া হয়েছিল। চার প্লেট নুডলস দোকানি কলেজে পাঠিয়েছিলেন বলে জানান। পুলিশ দেখছে, খাবার কাদের জন্য গিয়েছিল।
এ দিনই পুলিশের তরফে উদ্ধার হওয়া হকি স্টিক-সহ একাধিক নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণীর দ্বিতীয় দফার শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁর যৌনাঙ্গে ক্ষত মিলেছে। ঘাড় ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরের একাধিক জায়গায় আঁচড়ের দাগ আছে, যা যৌন নির্যাতনের দিকেই ইঙ্গিত করে বলে তদন্তকারীদের দাবি। ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞেরা জানান, যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে দুই ধরনের আঘাত পর্যবেক্ষণ করা হয়। যৌনাঙ্গের আঘাত এবং যৌনাঙ্গ বাদে শরীরের যে কোনও অংশে আঘাত। দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে ২০১৩ সালে অপরাধ আইনে পরিবর্তন (অ্যামেন্ডমেন্ট) করা হয়। তাতে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে যৌনাঙ্গ ছাড়াও মুখ ও পায়ুদ্বারের পরীক্ষা করতে হয়। দেখা হয়, সেখানে কোনও আঘাত রয়েছে কি না। সূত্রের খবর, তরুণীর মুখে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।
এ দিন চার সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল তথ্য অনুসন্ধানের জন্য লালবাজারে যায়। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘ কথাবার্তা হয়। এর পরে দলটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে কলেজে যায়।
একটি সূত্রের খবর, এমের নামে মোট ১১টি মামলা রয়েছে। গত এপ্রিলে কসবা থানার পুলিশকর্মীকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার হয় সে। নিজে আইনজীবী হওয়ায় দাপটেই পরের দিন জামিন পায়। পুরনো মামলা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ তদন্তকারী দল ধৃত তিন জনের কল ডিটেলস রেকর্ডিং সংগ্রহ করেছে। সূত্রের খবর, তাতে ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তিন জনের মধ্যে বারংবার কথা হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। কলেজ এবং থানা চত্বরে বার বার এম এবং জেয়ের টাওয়ার লোকেশন দেখা গিয়েছে। এমনকি, এমের ফোন থেকে একাধিক ‘প্রভাবশালী’ ছাত্রনেতাকেও ফোন করার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তরুণী অভিযোগ দায়ের করতে থানায় যাচ্ছেন কি না, সে ব্যাপারে নজর রাখতে তরুণীর বাড়ির কাছেও গিয়েছিল এম।